From a Doctor

অ্যানোরেক্সিয়া ( Anorexia nervosa) একটি খাওয়ার ব্যাধি এবং গুরুতর মানসিক অসুস্থতা

অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা; ওজন কমানোর মানসিক রোগ

অ্যানোরেক্সিয়া ( Anorexia nervosa) একটি খাওয়ার ব্যাধি এবং গুরুতর মানসিক অসুস্থতা ।

এই রোগে আক্রান্তরা ওজন কমানোর জন্য খাওয়া একেবারে কমিয়ে দেয়, অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেয়। তারা অত্যধিক ব্যায়াম করে ওজন কম রাখার জন্য। না খাওয়ার জন্য এবং অত্যধিক ব্যায়ামে তাদের শরীর শুকিয়ে যাওয়ার পরও তারা মনে করে তাদের ওজন বেড়ে যাচ্ছে। 

তারা মনে করে তাদের ওজন কম থাকলেও তারা মোটা।

যে কোনও বয়সের পুরুষ এবং মহিলারা অ্যানোরেক্সিয়া পেতে পারেন তবে এটি তরুণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। 

লক্ষণঃ

  • খাবার ইচ্ছা করে মিস দেয়া , খুব অল্প খাওয়া 
  • নিজেকে মোটা মনে করে যে কোন খাবার খাওয়া এড়ানো
  • বয়স ১৮ বছরের কম কিন্তু ওজন এবং উচ্চতা  বয়সের প্রত্যাশার চেয়ে কম
  • আপনার বি এম আই বা বডি মাস ইনডেক্স খুবই কম
  • আপনার ওজন নরমাল বা তার চেয়েও কম কিন্তু আপনি মনে করেন আপনি খুব মোটা
  • ক্ষুধা কমানোর জন্য ওষুধ খাওয়া
  • আয়নায় ঘন ঘন নিজের শরীর চেক করা
  • মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া (তরুনীদের)
  • মাথা ঘোরা, চুল পড়া, স্কিন শুকিয়ে যাওয়া
  • পাতলা চেহারা,ক্লান্তি,অনিদ্রা
  •  কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটে ব্যথা
  • নিম্ন রক্তচাপ,পানিশূন্যতা
  • কেউ কেউ পায়খানা বাড়ানোর জন্য ল্যক্সেটিভ খাওয়া শুরু করতে পারে

কেন হয়? 

অ্যানোরেক্সিয়ার সঠিক কারণটি অজানা। অনেক রোগের মতো এটি সম্ভবত জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং পরিবেশগত কারণগুলির সংমিশ্রণ।

জৈবিক– যদিও এটি এখনও পরিষ্কার নয় যে কোন জিনগুলি জড়িত রয়েছে, সেখানে জেনেটিক পরিবর্তন হতে পারে যা কিছু লোককে অ্যানোরেক্সিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

মানসিক- অ্যানোরেক্সিয়ার আক্রান্তরা পারফেকশনিজমে  বিশ্বাস করে। তারা মনে করে তাদের শরীরের  ওজন কমাতে পারফেক্ট এমাউন্টের খাবার খেতে হবে। বেশি খাওয়া যাবে না। বেশি খেলে বমি করে বের করে দিতে হবে। 

পরিবেশগত- আধুনিক পশ্চিমা সংস্কৃতি মেয়েদের ‘জিরো সাইজ’ বা পাতলা হতে জোর দেয়। অনেকে হালকা-পাতলা হওয়াকেই সফলতা মনে করে। পিয়ার প্রেসার বা অন্য অন্ধুদের দেখে প্রভাবিত হওয়া বিশেষত অল্প বয়সী মেয়েদের মধ্যে পাতলা হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। আবার যারা একটু মোটা তারা বুলিং এর স্বীকার হয়ে এই রোগে ভোগতে পারে। 

কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?

অ্যানোরেক্সিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব  তবে এটি সময় লাগে এবং একেক জনের জন্য একেক রকম। 

এই রোগের চিকিৎসা সাধারনত মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা করে থাকেন। ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য –

  • কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি বা কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা
  • মাঝে মাঝে এই রোগের কারনে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যা একই সাথে চিকিৎসা করা হয় 
  • পরিবারের সদস্যরা সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখা লাগে
  • কারন খুজে বের করে সেটা সমাধান করা

অ্যানোরেক্সিয়া আক্রান্তরা নিজে থেকে ডাক্তারের কাছে খুব কমই যান। এজন্য পরিবার ও বন্ধুদের দায়িত্ব তাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। 

জটিলতাঃ 

অ্যানোরেক্সিয়ার অসংখ্য জটিলতা থাকতে পারে। এটি মারাত্মক হতে পারে যে হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে কারন  অস্বাভাবিক হৃদ স্পন্দন  (এরিথমিয়া) বা ইলেক্ট্রোলাইটগুলির ভারসাম্যহীনতা।

অ্যানোরেক্সিয়ার অন্যান্য জটিলতার মধ্যে রয়েছে:

  • রক্ত সল্পতা
  • হার্টের সমস্যা যেমন মাইট্রাল ভালভ প্রল্যাপস, হার্ট ফেইলিউর
  • হাড়ের ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস), হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি বাড়ায়
  • পেশী কমে যায় 
  • মহিলাদের মাসিক না হওয়া
  • পুরুষদের মধ্যে, টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফোলাভাব বা বমি বমি ভাব
  • ইলেক্ট্রোলাইট অস্বাভাবিকতা যেমন রক্তে পটাসিয়াম, সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড কমে যাওয়া
  • কিডনির সমস্যা

মানসিক জটিলতাঃ 

  • হতাশা, উদ্বেগ এবং বদ মেজাজ
  • ব্যক্তিত্বের সমস্যা
  • অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসওর্ডার
  • মদপান এবং মাদক নেয়া
  • নিজেকে আঘাত করা , আত্মঘাতী চিন্তাভাবনা বা আত্মহত্যার প্রচেষ্টা

প্রতিরোধঃ

আক্রান্ত রোগীরা এটা প্রতিরোধ করতে পারবে না। এ দায়িত্ব মা-বাবা, ভাই-বোন বা পরিবারের অন্য সদস্য, বন্ধুদের, শিক্ষকদের, প্রতিবেশীদের। উপরে উল্লেখিত আচরনগত ও শারিরিক পরিবর্তন দেখলে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন এবং একজন সাইকিয়্যাট্রিস্ট এর কাছে নিয়ে যান। 

 

লিখেছেন,
এম বি বি এস
এম এস সি ক্যন্ডিডেট, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজ
দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা,ইউ কে

 

আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়