হঠাৎ করে অগ্নি-দুর্ঘটনা, গরম পানিতে শরীর পুড়ে যাওয়া ইত্যাদি আমাদের দেশে সচরাচর ঘটে থাকে।
একটু সতর্ক থাকলে সাধারণত এসব দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। তবু
যদি দুর্ঘটনা ঘটে যায় তবে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, পুড়ে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পোড়ার কারণ :
সাধারণত দুভাবে শরীর পুড়তে পারে :
১.শুকনা তাপ দ্বারা,যেমন- সরাসরি আগুনের সংস্পর্শে আসা, গরম লোহা, ইস্ত্রী, কয়েলের আগুন ইত্যাদি ;
অথবা
২. গরম পানি বা গরম কোনো তরল পদার্থ গায়ে লাগলে।
লক্ষনসমূহঃ
পুড়ে গেলে সেটা নিজে এমনিতেই বোঝবেন!কিন্তু কতোটা ক্ষতি হয়েছে সেটা বুঝতে নিচের লক্ষনগুলো খেয়াল রাখুন-
- পোড়া জায়গাটি খুবই বেদনাদায়ক হতে পারে এবং যে জায়গাটি পুড়ে গেছে সেখানকার ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে,
- ফোসকা পড়তে পারে, ক্ষতস্থানটি ফুলে যেতে পারে।
- পোড়া খুবই গুরুতর হলে ক্ষতস্থান কালো হয়ে যেতে পারে বা আশেপাশের ত্বকে সাদা দাগ দেখা যেতে পারে।
মনে রাখবেন,আক্রান্ত ব্যক্তি যে পরিমাণ ব্যথা অনুভব করবে তা পোড়াস্থানটি কতটুকু বিপজ্জনক তার সাথে সম্পর্কিত নয়। এমনকি খুব গুরুতর পোড়া তুলনামূলকভাবে ব্যথাহীন হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে এটি তার জীবনের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই সবার পোড়ার চিকিৎসা সম্পর্কে জানা থাকা প্রয়োজন
পুড়ে গেলে করণীয় :
- কারো শরীরের কোন অংশ পুড়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে তাপের উৎস থেকে সরিয়ে দিন।
- পোড়া জায়গার পাশে যদি কোন পোশাক বা গহনা থাকে তা সরিয়ে ফেলবেন। তবে ত্বকে আটকে থাকা কোনকিছুই সরানোর চেষ্টা করবেন না।
- যতটা সম্ভব পরিষ্কার পানি দিয়ে ক্ষতস্থানটি ধুয়ে নিন।
- ব্যথা থাকলে ব্যথা নিরাময়ের জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে পারেন।
কখন হাসপাতালে নিবেন:
গুরুতর দুর্ঘটনা না ঘটলে পোড়া অংশটুকুর চিকিৎসা বাড়িতেই করা যায়।
তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আপনার সাথে সাথে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত:
- পোড়া অংশটি যদি মুখে, বুকে বা যৌনাঙ্গে হয়ে থাকে
- যে কোন বড় ধরনের পড়া
- ক্ষতস্থানে কালো হয়ে গেলে
- যেকোনো আকারের গভীর পোড়া
- পুড়ে যাওয়ার পর রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে
- সকল ধরনের এসিড বা কোন রাসায়নিক বস্তু দ্বারা পোড়া অথবা বৈদুত্যিক পোড়া।
জটিলতা :
- কাশি এবং শ্বাসকষ্ট
- ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ
- হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পাওয়া
- কোন অস্থিসন্ধি পুড়ে গেলে সেখানে স্থায়ী অক্ষমতা তৈরি হওয়া
- ক্ষতস্থানে দাগ পড়ে যাওয়া বা কেলয়েড ইত্যাদি ।
হাসপাতালে কি চিকিৎসা দেওয়া হয় :
চিকিৎসা নির্ভর করে পোড়াটি শরীরের কোন জায়গায় হয়েছে এবং তা কতটুকু গুরুতর তার উপর।
হাসপাতালে প্রথমে ক্ষতস্থানের আকার এবং গভীরতা মূল্যায়ন করা হয়। তারপর পোড়া অংশটুকু পরিষ্কার করে ড্রেসিং দেয়া হয়। গুরুতর ক্ষতস্থানের ক্ষেত্রে গ্রাফট ব্যবহার করা লাগতে পারে।
অনেকে পোড়া স্থানে দাগ নিয়ে খুব উৎকন্ঠিত থাকেন। তেল বা আগুনে পোড়া দাগ দীর্ঘস্থায়ী হয়, সে ক্ষেত্রে দাগের প্রকারভেদে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম দেয়া হয়।
সতর্কতা :
- রান্না শেষ হওয়ার পর চুলার আগুন নিভিয়ে দিন। চুলার আগুনে কাপড় শুকাতে দেবেন না।
- যতোটুকু সম্ভব বাচ্চাদেরকে রান্নাঘরের বাইরে রাখুন।
- রান্নাঘরে তাড়াতাড়ি আগুন ধরে যেতে পারে এরকম পোশাক এবং ঢিলা পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন।
- পরিবেশনের আগে বাচ্চার খাবারের তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন।
- বৈদ্যুতিক তারগুলো বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখুন এবং মাঝেমধ্যেই ঘরের বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড গুলো পরীক্ষা করিয়ে নিন। কোন অবস্থাতেই নষ্ট সুইচ ব্যবহার করা যাবে না।
- সিলিন্ডার এবং গ্যাসের সংযোগ ঠিকঠাক রাখুন। মাঝেমধ্যেই ফুটো বা লিক আছে কিনা মিস্ত্রি ডেকে পরীক্ষা করুন।
- গোসল করানোর আগে বাচ্চার গোসলের পানির তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন।
- ম্যাচ, লাইটার বা মোমবাতি, গরম পানি, গরম ডাল বা তরকারি ছোট বাচ্চাদের হাতের নাগালের বাইরে রাখুন।
নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনার চিকিৎসককে এর পরামর্শ নিন:
- ক্ষতস্থানের ব্যথা ক্রমশ বৃদ্ধি পেলে।
- ফোসকা ক্রমাগত বড় হতে থাকলে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে না কমলে।
- ক্ষতস্থানে কোন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটলে।
ঘরের বাইরের পুড়ার ঝুঁকি থেকেও সতর্ক হোন বিশেষ করে আপনি যদি রাসায়নিক শিল্পে কাজ করে থাকেন।
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।