অ্যালার্জি বলতে সাধারনত একটি নির্দিষ্ট খাদ্য বা পদার্থের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিক্রিয়াকে বোঝায়।
অ্যালার্জি খুব ‘কমন’ একটি সমস্যা। আমরা অনেক মানুষকে দেখি যারা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরিহার করে চলেন কারন এগুলো খেলে তাদের সমস্যা হয়। অনেকে মনে করে বিশেষ কিছু খাবার (যেমন চিংড়িতে) শুধুমাত্র এলার্জি হয়। এটি একটি ভুল ধারনা। এলার্জি যেকোন মানুষের যেকোন জিনিসে হতে পারে। যেমনঃ ধুলো-বালিতে এলার্জি অনেক মানুষের থাকে যার কারনে শীতের সময় অনেক মানুষের অনবরন সর্দি কাশি লেগে থাকে।
এলার্জি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বেশিরভাগ এলার্জিই মৃদু সমস্যা করে যা কিছু জিনিস মেনে চলে বেচে থাকা সম্ভব।
মাঝে মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তবে এগুলো খুবই কম হয়।
কাদের হয়ঃ
যে কোন বয়সের, যে কারো এই সমস্যা হতে পারে। বাচ্চাদের এলার্জি হবার প্রবনতা বেশি থাকে।
আপনি বড় হবার পরেও বিভিন্ন এলার্জি নতুনভাবে হতে পারে।
কিসে অ্যালার্জি থাকতে পারে:
অনেক জিনিসে এলার্জি থাকা সম্ভব। এখানে খুব কমন কিছু জিনিসের নাম উল্লেখ করা হলো যেগুলোতে মানুষের এলার্জির সমস্যা হয়। এগুলোকে এলার্জেন বলে।
- ঘাস এবং গাছের পরাগ – অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা ঠান্ডাজনিত সর্দির মূল কারণ।
- ধূলিকণা
- পশুর চামড়া বা পশমের ছোট ছোট টুকরা
- বিভিন্ন খাবার – যেমনঃ বাদাম, ফল, শেলফিস, ডিম, গরুর দুধ
- পোকার কামড় এবং হুল থেকে
- ওষুধ – আইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন এবং এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ
- রাবার – গ্লাভস এবং কনডম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়
- ছত্রাকের মোল্ড -বাতাসে ছোট ছোট কণা ছাড়তে পারে যা নাকে ঢুকে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে
- ডিটারজেন্ট এবং চুলের রঙ সহ বিভিন্ন কেমিক্যাল
একটি বিষয় খুব ভালোভাবে বোঝা প্রয়োজন। কোন দ্রব্যে যার এলার্জি আছে শুধু তারই সমস্যা হবে। অন্য কারো সমস্যা হবে না। যেমন চিংড়ি খেলে সবার সমস্যা হয় না, কিছু মানুষের হতে পারে।
লক্ষণসমূহঃ
অ্যালার্জির লক্ষণ সমূহ সাধারণত অ্যালার্জেনের সংস্পর্শের কয়েক মিনিটের মধ্যে দ্রুত ঘটে।
- হাঁচি
- সর্দি বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া এবং চোখে চুলকানি
- কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হওয়া
- চামড়ায় ফুসকুড়ি, চুলকানি
- হাঁপানি রোগীদের শ্বাসকষ্ট অত্যধিক বেড়ে যাওয়া
- বেশিরভাগ অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াগুলি হালকা হয় তবে মাঝে মাঝে অ্যানাফিল্যাক্সিস বা অ্যানাফিল্যাকটিক শক নামক একটি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এটি হলে তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। এরকম সমস্যা হলে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সাধারণ এলার্জিতে কি করবেনঃ
যেসব জিনিসে আপনার এলার্জি আছে সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। যেমন-
- যাদের ধুলো-বালিতে এলার্জি আছে তারা বাইরে বেড়োনোর সময় নাক মুখ মাস্ক বা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন।
- যাদের ঘরে বিড়াল/কুকুর বা অন্য লোমশ গৃহপালিত প্রানী আছে, তাদের এসবে এলার্জি থাকলে প্রানী থেকে দূরে থাকতে হবে এবং ঘর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- যাদের কোন খাবারে এলার্জি আছে তারা সেই খাবার থেকে দূরে থাকবেন। কোথাও খেতে গেলে আগে থেকে বলে রাখবেন এই খাবারে আপনার এলার্জি আছে। বিশেষ করে রেস্টুরেন্টে গেলে আপনার যদি বাদাম বা এজাতীয় খাবারে এলার্জি থাকে তাহলে আগে থেকে বলে রাখুন।
- ছত্রাকের হাত থেকে বাঁচতে ধুলোবালি ও নির্মানাধীন বিল্ডিং সাইট এড়িয়ে চলুন।
- পোকামাকড় সবসম্য এড়িয়ে চলা ভালো।
এইসব দিক খেয়াল রাখলে আপনার এলার্জির সমস্যা কম থাকবে বা থাকলেও সেটা নিয়ন্ত্রনে থাকবে। আপনার যেটায় সমস্যা হয় সেটা আপনি এড়িয়ে চলুন বাকিগুলো আপনি অন্য সাধারন মানুষের মতোই সতর্কতা অবলম্ভন করবেন।
চিকিৎসাঃ
এলার্জির চিকিৎসা কি হবে সেটা আপনার চিকিৎসক নির্ধারন করবেন। এটার জন্য প্রথমেই বিশেষজ্ঞ চিকিতসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আপনার আশেপাশে এম বি বি এস চিকিৎসকের কাছে এটার সকল চিকিৎসা পাবেন।
এছাড়াও আপনার সর্দির জন্য যেকোন ফার্মেসী থেকে এন্টিহিস্টামিন গ্রুপের ঔষধ কিনে খেতে পারবেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ঔষধ সেবন করাই বাঞ্চনীয়।
মূল চিকিৎসা এলার্জেন থেকে দূরে থাকাই।
কারো যদি কখনো এনাফাইলেক্সিস হয় বা আপনার চিকিৎসক আপনাকে বলেন আপনার এনাফাইলেক্সিস হয়েছিলো তাহলে আপনাকে হয়তো সবসময় সাথে রাখার জন্য কিছু ঔষুধ দেয়া হতে পারে। এই সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।