কানে ব্যাথা খুবই প্রচলিত একটি সমস্যা। সব বয়সের মানুষের বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের কানে ব্যাথা বেশি হয়। ব্যাথা তীক্ষ্ণ, মৃদু বা জ্বালাপোড়ার অনুভূতি সম্পন্ন হতে পারে, যা অল্প সময়ের জন্য আসতে যেতে পারে বা সার্বক্ষণিক-ও হতে পারে। ব্যাথা দু কানেই হতে পারে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক কানে হয়ে থাকে।
সাধারণত কানে ব্যাথা আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায় তবে ব্যাথার পাশাপাশি কিছু বিশেষ লক্ষণ উপস্থিত থাকলে অনতিবিলম্বে ডাক্তার দেখাতে হবে।
কারণ
- ইয়ার ওয়াক্স:
এটি হল একপ্রকার মোমের মত পদার্থ যা কানে প্রতিনিয়ত তৈরি হয় । কিন্তু এটি জমাট বাধলে ব্যাথা হয় এবং অস্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি হ্রাস বা লোপ-ও পেতে পারে।
- সাধারন সর্দি-জ্বর
- ইনফেকশন বা সংক্রমণঃকানে ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে ইনফেকশন বা সংক্রমণ। অনেক সময় সংক্রমণ সাধারণ সর্দি জ্বর, এলার্জি বা অন্যান্য শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের সরাসরি পরিণতি হিসেবে হয়ে থাকে।
- আকস্মিক বায়ু চাপে পরিবর্তনঃ প্লেনে চড়লে বা লিফটে উঠলে কানের পর্দার দু পাশে অর্থাৎ পর্দার বাইরে আর ভিতরে বায়ুচাপের তারতম্যের জন্য ব্যাথা হতে পারে।
- কানে বহিরাগত কোনো পদার্থ বা পোকা ঢুকে যাওয়া
- কানে আঘাতের জন্য ব্যাথা হওয়া
- কানে ব্রণ বা ফোঁড়া হওয়া
- দেহের অন্য জায়গার সমস্যার জন্য কানে ব্যাথা হতে পারে (রেফারড পেইন)। যেমন,
➔ দাঁতের সমস্যা উদাহরণস্বরূপ আক্কেল দাঁত উঠা বা ডেন্টাল ক্যারিস,এবসেস ইত্যাদি হওয়া;
➔ গলা ব্যাথা যেমন টনসিলাইটিস (টনসিলের সংক্রমণ) বা ফ্যারিনজাইটিস (খাদ্যনালীর সংক্রমণ);
➔ চোয়ালের জয়েন্টে সমস্যা যা আর্থাইটিস বা অন্য কারনে হতে পারে;
➔ লালা গ্রন্থি (স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড) এ পাথর হওয়া;
লক্ষণ:
- কানে ব্যাথা হওয়াঃ ব্যাথা তীক্ষ্ণ, মৃদু বা জ্বালাপোড়ার অনুভূতি সম্পন্ন হতে পারে, যা অল্প সময়ের জন্য আসতে যেতে পারে বা সার্বক্ষণিক-ও হতে পারে।
- কান থেকে তরল পদার্থ বের হওয়া
- শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া
- কানে ব্যাথার সাথে জ্বর থাকতে পারে।
বাচ্চদের কানে ইনফেকশন হয়েছে কিভাবে বুঝবেন?
- কানে ব্যাথা বিশেষত শোয়া অবস্থায় কানে বেশি ব্যাথা
- বাচ্চার হাত দিয়ে কান টানার প্রবণতা
- ঘুমানোতে সমস্যা
- শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া, কথার জবাব না দেয়া
- জ্বর থাকা (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি)
- কান থেকে তরল পদার্থ বের হওয়া
- মাথা ব্যাথা
- ক্ষুধামন্দা
প্রতিরোধ
নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো গুলো কানে ব্যাথা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- কান শুকনো রাখুন। সাতার এবং গোসলের পর কান ভালোভাবে মুছে নিন
- পিঠের উপর সোজা হয়ে ঘুমান। এটি কানের জমা হওয়া তরল পদার্থ বের হয়ে আসতে সাহায্য করে
- প্লেনে বা উঁচু জায়গায় চুয়িং গাম চর্বণ কানের পর্দার দু পাশে বায়ু চাপের তারতম্যে নিরসনে উপকারী ভূমিকা পালন করে
- কানে বাইরের কিছু (যেমন কটন বাড) ঢুকাবেন না।
কানে ব্যাথা হলে কি করবেন
- কানে উষ্ণ কাপড় লাগিয়ে রাখলে তা ব্যাথা উপশমে সাহায্য করতে পারে
- ব্যাথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন
কানে ব্যাথা হলে কি করবেন না
- কখনোই ওয়াক্স বা তরল পদার্থ বের করে আনার জন্য কটন বাড বা অন্য কিছু কানে ঢুকাবেন না। এতে করে কানের খইল আরো ভিতরে গিয়ে ব্লক সৃষ্টি করতে পারে এবং জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- কানের ভিতর পানি যেতে দিবেন না । এতে করে কানে জমা হওয়া পানিতে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বিস্তার লাভ করতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
- কানে ব্যাথার সাথে তীব্র জ্বর থাকলে;
- মাথা ব্যাথা থাকলে বা ঝিমঝিম করলে;
- কান থেকে রক্ত বা পূঁজজাতীয় তরল পদার্থ বের হলে;
- শ্রবণশক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়া বা লোপ পেলে;
- কানে বহিরাগত কিছু আটকে আছে বোধ হলে;
- কানের পিছনে বা আশপাশের কোনো অংশ ফোলা থাকলে;
- কানে তীব্র ব্যাথা হঠাত করে বন্ধ হয়ে গেলে; (এটি কানের পর্দা ফেটে যাওয়া নির্দেশ করে)
- কানে ব্যাথার লক্ষণ ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভাল না হলে, বা খারাপ না হলে অনতিবিলম্বে ডাক্তার এর শরণাপন্ন হতে হবে।
কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?
ডাক্তার কানে ব্যাথার সঠিক কারণ নির্ণয় করে সে অনুসারে চিকিৎসা প্রদান করবেন। মাঝে মাঝে কানে ব্যাথার কারন যেমন ওয়াক্স বের করে আনতে যন্ত্র ব্যবহার করা লাগে। বেশিরভাগ সময় শুধু ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা হয়।
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।