কোভিড১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়। নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা জরুরী। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এই তথ্যগুলো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসারে দেয়ার জন্য।
১) আমি সুস্থ সবল মানুষ। আমার কোন রোগ নেই। আমি কেন ভ্যাকসিন নিবো?
আপনি ভ্যাকসিন নিবেন কারন করোনাভাইরাস সুস্থ সবল মানুষকেও আক্রান্ত করতে পারে। বয়সে তরুন, সুস্থ সবল অনেক মানুষ এখন মারাত্মক করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়া আপনি আক্রান্ত হলে সেটা আপনার পরিবারে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এজন্য সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে।
২) ভ্যাকসিনের কয়টি ডোজ নিতে হবে?
ভ্যাকসিনের ২ টি ডোজ নিতে হবে। ১ম ডোজ নেয়ার পর ২য় ডোজের নির্ধারিত তারিখ আপনার ভ্যাকসিন কার্ডে লিখে দেওয়া হবে বা আপনাকে জানানো হবে।
৩) ভ্যাকসিনের কি কোন সাইড ইফেক্ট বা পার্শ-পতিক্রিয়া আছে?
সকল ভ্যাকসিনের মতো কোভিড১৯ ভ্যাকসিনেরও কিছু সাধারন সাইড ইফেক্ট দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন সাইড ইফেক্ট হয় না। হলেও সেগুলো সাধারনত- জ্বর, যেখানে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে সেখানে ব্যাথা, গায়ে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, দুর্বল লাগা, ঠান্ডা অনুভুতি হওয়া এবং ডায়রিয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
৪) সাধারণ সাইড ইফেক্ট দেখা দিলে কি ঔষুধ খাবো?
সাধারণ সাইড ইফেক্ট এর জন্য কোন ঔষুধ খেতে হবে না। শুধু বেশি জ্বর, মাথাব্যাথা, গায়ে ব্যাথা ইত্যাদির জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষুধ খেতে পাড়েন। ২/৩ দিনের বেশি এসব সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
৫) ভ্যাকসিন নেয়ার পর কি খেতে হবে?
আগের মতোই সব খাবার খেতে পারবেন। আলাদা করে কিছু খেতে হবে না বা বাদ দিতে হবে না।
৬) বুকের দুধ পান করানো মায়েরা কি ভ্যাকসিন নিতে পারবেন?
জি, পারবেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞগন আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসারে মত দিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সে অনুসারে নির্দেশনা জানাবেন।
৭) গর্ভবতী মহিলারা কি ভ্যাকসিন নিতে পারবেন?
জি, পারবেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞগন আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসারে মত দিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সে অনুসারে নির্দেশনা জানাবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে গর্ভাবস্থার কতো সপ্তাহ পার হয়েছে। অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর মতে ও আন্তর্জাতিকগাইডলাইন অনুসারে, ভ্যাকসিন নিতে হবে গর্ভাবস্থার ১৩তম সপ্তাহ পার হবার পর এবং ৩৪তম সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে।
৮) আমার অ্যাজমা আছে, আমি কি ভ্যাকসিন নিতে পারবো?
জি পারবেন। অ্যাজমা রোগীরা কোভিডে আক্রান্ত হলে বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আপনার অবশ্যই ভ্যাকসিন নেয়া উচিত।
৯) আমার ডায়বেটিস/ হার্টের রোগ/ উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি আছে, আমি কি ভ্যাকসিন নিবো?
জি, আপনি ভ্যাকসিন নিবেন।
১০) আমার বর্তমানে জ্বর, কাশি, সর্দি ইত্যাদি আছে, আমি কি ভ্যাকসিন নিবো?
না। আপনি সুস্থ হয়ে যাবার পর ভ্যাকসিন নিবেন।
১১) আমি বর্তমানে কোভিড১৯ এ আক্রান্ত। এই অবস্থায় ভ্যাকসিন নিবো?
না। আপনি আক্রান্ত হওয়ার পর ১৪ দিন কোয়ারিন্টিনে থাকবেন। এরপর ভ্যাকসিন নিবেন।
১২) আমার কয়েক মাস আগে কোভিড১৯ হয়েছিলো। এখন সুস্থ আছি। আমার কি ভ্যাকসিন নেয়া লাগবে?
জি, লাগবে। কোভিড১৯ ভ্যাকসিন আপনার করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো শক্তিশালী করে তুলবে।
১৩) আমি কোভিড১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্লাজমা থেরাপি নিয়েছি। আমি ভ্যাকসিন নিতে পারবো?
পারবেন। তবে আপনাকে ৯০ দিন পর ভ্যাকসিন নিতে হবে।
১৪) কারা কোভিড১৯ ভ্যাকসিন নিতে পারবে না?
যাদের কোভিড১৯ ভ্যাকসিনের কোন উপাদানে এলার্জি আছে। যেহেতু আমাদের দেশে কার কোন উপাদানে এলার্জি আছে সে বিষয়ে আলাদা কোন তথ্য নেই এবং এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের কারনে মারাত্মক এলার্জিক রিয়েকশনের খবর খুব একটা পাওয়া যায় নি। এছাড়া যারা উপরে উল্লেখিত আরো কয়েকটি কারনে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না।
১৫) আমার ধূলা-বালি, ঠান্ডা বাতাস, ফুলের রেণু ইত্যাদিতে এলার্জি আছে। আমি ভ্যাকসিন নিতে পারবো?
আপনার এসব এলার্জি থাকলেও ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। কিন্তু সাবধানতা হিসেবে যেখানে ভ্যাকসিন নিবেন সেখানে ভ্যাকসিন নেয়ার পর নুন্যতম ৩০ মিনিট অপেক্ষা করবেন। কোন সমস্যা হলে সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে।
১৬) ১ম ও ২য় ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার সময় কয়বার ভ্যাকসিন দেয়া হবে?
একবার করে। প্রতি ডোজে কোনভাবেই একবারের অধিক আপনাকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে না।
১৭) আমি আগে অক্সফোর্ড- এস্ট্রোজনেকা (কোভিশিল্ড) এর ১ম ডোজ নিয়েছিলাম। এখন ২য় ডোজ নিতে পারবো?
পারবেন। অক্সফোর্ড- এস্ট্রোজনেকা ভ্যাকসিন এখন বাংলাদেশে পর্যাপ্ত আছে। যারা আগে ২য় ডোজ পান নি তারা ১ম ডোজ যে কেন্দ্রে গিয়ে দিয়েছিলেন সেখানে যোগাযোগ করুন বা নিকটস্থ টিকাদান কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
১৮) আমার অক্সফোর্ড- এস্ট্রোজনেকা (কোভিশিল্ড) এর ১ম ডোজ নেয়ার পর ২/৩/৪/৫ মাস সময় পার হয়ে গেছে। এখন ২য় ডোজ নিলে কাজ হবে?
হবে। এখন যেহেতু এই ভ্যাকসিন এভেইলেবল আছে তাই যতো দ্রুত সম্ভব ২য় ডোজ নিয়ে নিন।
এই পোস্ট ক্রমাগত আপডেট করা হবে। সকল তথ্য ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, সিডিসি এবং বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ভ্যাকসিন নির্দেশিকা থেকে নেয়া।