নেক পেইন আমাদের দেশে খুবই প্রচলিত সমস্যা৷ ঘাড় নড়াচড়ার সময় ব্যাথা বা স্থির অবস্থাতে ঘাড় শক্ত হয়ে থাকলে তাকে নেক পেইন বলা যায়।
কেন হয়?
এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুব সাধারন কারনে হয়ে থাকে । এক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি নেক পেইনের প্রধান কারণ। যেমনঃ
- দীর্ঘক্ষণ মাথা ঝুঁকে বা ঘাড় বাঁকা করে কোনো কাজ করলে;
- ঘুমানোর সময় কোনো ক্ষতিকর অবস্থানে, বিশেষত পেটের ওপর উপুড় হয়ে ঘুমালে;
- কাঁধে ভারী কোনো ব্যাগ দীর্ঘসময় বহন করলে নেক পেইন হয়ে থাকে ।
- তাছাড়া দীর্ঘক্ষন স্থিতিশীল থাকার পর ঘাড়ের আকস্মিক দ্রুত সঞ্চালনায় মাংস পেশিতে টান পড়ে । এটিও নেক পেইনের উল্লেখযোগ্য কারণ ।
- গাড়িতে বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াতের সময় ব্রেক চাপার মুহূর্তে ঘাড়ের সামনে পিছনে আকস্মিক মুভমেন্ট হতে পারে । এতে ঘাড়ে থাকা মাংসপেশি, হাড় বা স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে । যাকে বলা হয় হুইপল্যাশ ইনজুরি । এই কারনেও নেক পেইন হয়ে থাকে।
এসব ছাড়াও অন্যান্য রোগের কারণে নেক পেইন হয়ে থাকে । যেমনঃ
- আরথ্রাইটিস (শরীরের সব জয়েন্টে প্রচন্ড ব্যাথা হওয়া)
- লিম্ফোমা (শরীরের লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে ক্যান্সার হওয়া)
- পেজেট’স ডিজিস ( দেহের হাড়গুলোতে অতি দ্রুত ক্ষয় ও বৃদ্ধ্বি ঘটা ,যার জন্য তা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে
- ফাইব্রোমায়েলজিয়া (পুরো শরীর জুড়ে মাংসপেশীতে ব্যাথা হওয়া)
লক্ষণসমূহঃ
- ঘাড় নড়াচড়া করতে ব্যাথা হওয়া ।
- ঘাড়ে সার্বক্ষণিক ‘স্টিফনেস’ অর্থাৎ শক্ত অনুভূত হওয়া ।
নেক পেইন হলে আপনি কি করবেন?
- ঘাড়ের সাধারণ সঞ্চালনা বজায় রাখবেন । দৈনন্দিন জীবনের সাধারন কাজকর্ম চালিয়ে যান ।
- ব্যাথা তীব্র হলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন । তবে বেশিক্ষণ নিশ্চল রাখবেন না । নিশ্চলতা পরিস্থিতি আরো খারাপ করতে পারে।
- ব্যাথার জন্য প্রথমে ঠান্ডা ও পরে গরম শেক দিতে পারেন । খেয়াল রাখবেন ঠান্ডা বরফ এবং গরম পানির ব্যাগ কখনো সরাসরি চামড়ায় লাগাবেন না ।
- ঘাড়ের ব্যায়াম করুন । ঘাড়ের নমনীয়তা বজায় রাখতে নিম্নোক্ত সহজ ব্যায়ামটি করতে পারেন – পিঠ, কাঁধ ও ঘাড় সোজা করে বসুন । সোজা সামনের দিকে তাকান । এবার ধীরে ধীরে আপনার মাথা বাম কাঁধের উপর পর্যন্ত ঘুরান । ৫ সেকেন্ড এই অবস্থানে থেকে আবার ধীরে ধীরে মাথা সোজা করুন । এভাবে একই ব্যায়াম ডান দিকেও সঞ্চালন করুন । খেয়াল রাখবেন মাথা ঘুরানোর গতি যাতে খুব দ্রুত না হয় । কাজের মাঝে কিছুক্ষণ পর পর এই ব্যায়াম ঘাড়ের জন্য উপকারী ।
- পেইন কিলার মেডিসিন চিকিৎসকের পরামর্শমতো খেতে পারেন ।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
সাধারন কারনে নেক পেইন হলে তা কিছুদিনের মধ্যে নিজ থেকে ভাল হয় । তবে নেক পেইনের সাথে নিম্নোক্ত সমস্যা গুলো থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া সমীচীনঃ
- ব্যাথা অসহনীয়, এবং সময়ের সাথে বাড়তে থাকলে;
- ব্যাথা এক সপ্তাহের বেশি সময় স্থায়ী হলে;
- ঘাড় অবশ মনে হলে বা চিনচিন অনুভূতি থাকলে;
- হাতে বা পায়ে ব্যাথা অনুভূত হলে;
- নেক পেইনের পাশাপাশি অন্যান্য লক্ষণ যেমন হাটার ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারা, প্রস্রাবে সমস্যা, শরীরের ওজন কমে যাওয়া, জ্বর থাকা প্রভৃতি উপস্থিত থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ।
কিভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়?
- চিকিৎসক আপনার কাছ থেকে ঘটনাপ্রবাহ (হিস্টরি) জানবেন ।
- আপনাকে পরীক্ষা করে দেখবেন ।
- কিছু টেস্ট দিতে পারেন প্রয়োজনমতো ।
- রোগ নির্নয় করে চিকিৎসক আপনাকে ওষধ, বিভিন্ন ব্যায়াম ও প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিষ্ট এর কাছে পাঠাতে পারেন। সমস্যা বড় কিছু হলে আপনাকে হাড়রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে পারেন ।
এই সমস্যার জন্য একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে যাবেন । তিনি প্রয়োজন হলে হাড়রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করবেন ।
কিভাবে নেক পেইন থেকে বেঁচে থাকবেন?
- অঙ্গভঙ্গী ঠিক রাখবেন । বসার সময় পিঠ, ঘাড় ও মাথা সোজা রাখবেন । বেশিক্ষণ মাথা ঝুঁকে কাজ করবেন না ।
- কম্পিউটারে কাজ করলে মনিটর চোখ বরাবর রাখবেন ।
- ঘুমানোর সময় সোজা হয়ে বা পাশ করে ঘুমাবেন । উপুড় হয়ে ঘুমাবেন না । মধ্যম আকারের দৃড় বালিশ ব্যবহার করবেন । বালিশ একটি ব্যবহার করা উত্তম কারন এতে করে ঘাড়ের উপর চাপ কম পড়ে ।
- দীর্ঘসময় একই অবস্থানে কাজ করবেন না । নিয়মিত বিরতি নিন ।
- কাঁধে ভারী ব্যাগ বহন করবেন না ।
- নিয়মিত ব্যায়াম করূন ।