From a Doctor

টাইফয়েড কেন হয়,চিকিৎসা কি

টাইফয়েড কেন হয়,চিকিৎসা কি

টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে। এই ইনফেকশন খুব দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সময়মতো চিকিৎসা না করালে ইনফেকশনের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

সালমনেলা টাইফি (Salmonella typhi) নামক ব্যাকটেরিয়া এই রোগ  করে। 

কেন হয়?

 টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই একজন মানুষ থেকে অন্যজনের কাছে ছড়িয়ে পড়তে পারে। টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তির মল, এমনকি প্রস্রাবের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত খাবার বা পানি আক্রান্ত ব্যক্তির পায়খানা প্রস্রাব দ্বারা  দূষিত হলে সুস্থ কোন মানুষ সেই খাবার বা পানি পান করলে তার টাইফয়েড হতে পারে।

যেসব এলাকায় স্যানিটারী ল্যাট্রিন নেই এবং মানুষ খোলা স্থানে মলত্যাগ করে সেসব জায়গায় টাইফয়েড এর প্রকোপ দেখা যায়। এছাড়া যারা পায়খানা করার পর সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে খাবার প্রস্তুত করে  তাদের কাছ থেকেও টাইফয়েডের জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।

লক্ষণসমূহঃ

  •  উচ্চ মাত্রার জ্বর
  •  মাথা ব্যাথা
  •  সারা শরীরে ব্যাথা
  •  কোষ্ঠকাঠিন্য
  •  কাশি
  •  খাবারে অরুচি
  •  বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  •  পেটে ব্যাথা
  •  ডায়রিয়া
  •  পেটের চামড়া লাল রঙের র‍্যাশ থেকে দেওয়া

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

 যেকোনো উচ্চমাত্রার জ্বর যদি দু-একদিনের মধ্যে কমে আসে এবং একই সাথে   টাইফয়েড এর এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যায় তাহলে সাথে সাথে কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।  টাইফয়েড এর চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু করবেন ততই ভালো। কারণ দেরিতে চিকিৎসা শুরু করার আগেই ভয়ঙ্কর জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?

  • আপনার রোগ বর্ণনা শুনে এবং বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করার পর আপনার টাইফয়েড হয়েছে মনে হলে চিকিৎসক বেশ কিছু টেস্ট করে নিশ্চিত হবেন।
  • আপনার যদি টাইফয়েড নিশ্চিত হয় এবং ইনফেকশন মৃদু হয় তাহলে চিকিৎসক আপনাকে ৭ থেকে ১৪ দিনের এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ দিতে পারেন। 
  • এন্টিবায়োটিক শুরু করার ২-৩ দিনের মধ্যে আপনার আওস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু পুরো কোর্স এন্টিবায়োটিক অবশ্যই শেষ করতে হবে। 
  •  ইনফেকশনের অবস্থা খারাপ হলে আপনার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে এবং সেখান রক্তনালী দিয়ে আপনাকে ঔষধ দেয়া হবে।
  •  সময়মতো টাইপের এর চিকিৎসা না করলে প্রতি ৫ জন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে একজন মারা যেতে পারে। কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা করালে  মারা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

আপনি কি করবেন?

  • টাইফয়েড থেকে বাঁচতে পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি পান করুন
  • হোটেল রেস্টুরেন্টের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন দেখলে সেগুলোতে খাওয়া পরিহার করুন
  • রাস্তা থেকে কাঁচা বা ঠান্ডা খাবার খাওয়া পরিহার করুন
  • খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন 
  • টাইফয়েড হয়ে গেলে প্রচুর পানি পান করুন
  • নিয়মমতো ওষুধ সেবন করুন
  • পুষ্টিকর খাবার খান

সতর্কতাঃ

টাইফয়েডের কারনে পরবর্তীতে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। আপনার টাইফয়েড হলে এবং সেটা ভাল হয়ে যাবার পর যদি নেচের কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে হাসপাতালে যান-

  • সব সময় ক্লান্ত বোধ
  • শ্বাসকষ্ট
  • ফ্যাকাশে চামড়া
  • অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
  • রক্ত বমি
  • পায়খানা কালো রঙ্গয়ের হয়ে যাওয়া
  • হঠাত করে পেঠে তীব্র ব্যাথা।

 

লিখেছেন,
ডা কামরুল ইসলাম শিপু
সিনিয়র লেকচারার, মাইক্রোবায়োলজি, নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ
এম এস সি ক্যান্ডিডেট, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজ
দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা, ইউ কে।