From a Doctor

ডায়বেটিস, কাদের হয়, যা জানা জরুরী

ডায়বেটিস; কাদের হয়, লক্ষন ও চিকিৎসা

শরীরে রক্তে চিনির পরিমান অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আমরা এটাকে ডায়বেটিস বলি। 

প্রধানত দুই ধরনের ডায়বেটিস হয়। টাইপ ১ ও টাইপ ২। আমরা টাইপ ২ ডায়বেটিস নিয়ে কথা বলবো কারন এটি বেশি হয়। 

কাদের বেশি হয়?

  • পরিবারে কারো ডায়বেটিস থাকলে (যেমন বাবা, ভাই বা বোন)
  • অতিরিক্ত ওজন
  • স্থুল শরীর
  • আপনার বয়স ২৫ এর বেশি হলে

লক্ষনসমূহঃ

  • স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব করা, বিশেষত রাতে
  • সারাক্ষণ পানির পিপাসা লাগা 
  • খুব ক্লান্ত বোধ করা
  • কোন কারন ছাড়া ওজন কমা
  • আপনার লিঙ্গ বা যোনির চারপাশে চুলকানি বা লাল হয়ে যাওয়া
  • কাটা বা ক্ষত নিরাময়ে বেশি সময় লাগা
  • চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া

কিভাবে রোগ নির্ণয় হয়?

আপনার চিকিৎসক আপনার লক্ষণ সমূহের বর্ণনা লক্ষণ সমূহের বর্ণনা শুনে এবং আপনার বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করে আপনাকে প্রাথমিকভাবে জানাতে পারেন যে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

অতঃপর আপনার কিছু টেস্ট করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন;  আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ দেখার জন্য একাধিক টেস্ট লাগতে পারে। এছাড়াও আপনার লক্ষণগুলো বিবেচনা করে অন্যান্য টেস্ট দেয়া হতে পারে।

আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ দেখার টেস্ট এর রেজাল্ট চলে আসার পর আপনার চিকিৎসক নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন আপনার ডায়াবেটিস আছে কি না। 

কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?

আপনার ডায়াবেটিসের অবস্থা  বোঝে চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন আপনাকে কিভাবে চিকিৎসা করা যায়। সাধারণত ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিম্নোক্ত ভাবে করা হয় –

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ
  • নিয়মিত ব্যায়াম
  • ওজন কমানো
  •  ডায়াবেটিসের মুখে খাওয়ার ওষুধ বা চামড়ার নিচে ইঞ্জেকশন দেয়ার ইনসুলিন থেরাপি
  • ব্লাড সুগার মনিটরিং

উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে  আলাদা আলাদা করে পড়তে পারেন এখানে। 

 আপনি কি করবেন?

  •  ডায়াবেটিস হয়ে গেলে সেটা নিয়ে প্রথমে আতঙ্কিত হবেন না। আপনার রক্তের চিনির পরিমাণ নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখতে পারলে ডায়াবেটিস নিয়েও আপনি সাধারণ জীবন যাপন করতে পারবেন। 
  • আপনার চিকিৎসক আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ,  নিয়মিত ব্যায়াম,  ওজন  কমানো সহ  যে পরামর্শ গুলো দিবেন, সেগুলো মেনে চলতে হবে। 
  •  আপনাকে যদি কোন ডায়াবেটিসের মুখে খাওয়ার ওষুধ দেয়া হয়, তাহলে সেটা সময় মতো খেতে হবে। 
  •  আপনাকে ইনসুলিন দেয়া হলে, প্রথমেই জেনে নেবেন কিভাবে ইনসুলিন নিতে হয়। এরপর ইনসুলিন নেয়ার ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। আপনার চিকিৎসকের  পরামর্শ ব্যতীত অন্য কারো কথা শুনে ডায়াবেটিসের ঔষধ এর কোন পরিবর্তন করা যাবে না।

সতর্কতাঃ

আপনার ডায়াবেটিস ডায়াগনোসিস হওয়ার পর নিয়মিত রক্তের চিনির পরিমাণ পরিমাপ করতে হবে।রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে ( হাইপারগ্লাইসেমিয়া)  বা কমে গেলে ( হাইপোগ্লাইসেমিয়া)  বিভিন্ন লক্ষণ এর মাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে এই দুই   বিষয়ই খেয়াল রাখতে হবে।

 হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে অতিরিক্ত চিনি থাকার লক্ষণ 

  •  ঘন ঘন মূত্রত্যাগ 
  • অতিরিক্ত পানি পিপাসা
  •  মুখ শুকিয়ে যাওয়া
  •  চোখে ঝাপসা দেখা
  •  অতিরিক্ত ক্লান্তি
  •  মাথা ব্যাথা

হাইপোগ্লাইসেমিয়া  বা রক্তে স্বাভাবিকের চেয়ে কম চিনি থাকার লক্ষণঃ

  • হঠাৎ করে ঘাম হওয়া
  •  শারীরিকভাবে দুর্বল লাগা
  •  মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যাথা
  •  হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
  • মাথা হালকা লাগা
  •  খুব বেশি ক্ষুধা লাগা
  •  হাত পা কাপা
  •   ঘুম ঘুম লাগা
  •  কথা জড়িয়ে যাওয়া

 এছাড়াও ডায়াবেটিস হলে বিভিন্ন রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন

  •  বিভিন্ন হূদরোগ
  •  স্ট্রোক
  •  পায়ের বিভিন্ন  সমস্যা যেমন ইনফেকশন
  •  চোখের সমস্যা
  •  গর্ভপাত
  •  কিডনিতে সমস্যা
  •  বিভিন্ন ধরনের যৌন সমস্যা

ডায়াবেটিস  নিয়ে জীবন যাপন করতে এসব বিষয় জানা জরুরী।  তাহলে এসব কঠিন ডায়াবেটিস জনিত জটিলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব।

 

আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত ও সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক বলতে নুন্যতম এম বি বি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়