From a Doctor

ডায়রিয়া

ডায়রিয়া; অবহেলা মৃত্যুর কারন হতে পারে

সাধারণত দিনে তিন বারের বেশি পাতলা পায়খানা হলে সেটাকে ডায়রিয়া বলে। অথবা কারো যদি স্বাভাবিকভাবে দিনে যতবার পায়খানা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি বার পায়খানা হয়ে থাকে  সেটাকেও  ডায়রিয়া বলা যায়।

ডায়রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের অবহেলা কাজ করে। অনেকে মনে করেন এটি খুবই ছোটখাটো সমস্যা। কিন্তু  ডায়রিয়ার কারণে প্রতিবছর পৃথিবীব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার বাচ্চা মারা যায়। এছাড়াও প্রতিবছর প্রায় ১.৭  বিলিয়ন শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়। দুঃখের বিষয় হল, এসব মৃত্যু খুব সহজেই প্রতিরোধ করা যেত যদি  আমরা এ রোগের ব্যাপারে সচেতন হতাম এবং এই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি, সেনিটেশন এবং সাধারন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা  পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারতাম।

কেন হয়?

  • ডায়রিয়ার মূল কারণ ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পেটের ইনফেকশন।ইনফেকশন অপরিষ্কার পানি, ময়লা খাবার এবং  হাত সাবান দিয়ে না ধোয়ার  অভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে।
  •  পেটের বিভিন্ন অসুখ যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস এর কারণে
  •  যেসব খাবার খেলে বদ হজম হয় সেগুলো খেলে
  •  ফুড পয়জনিং হলে
  •  অতিরিক্ত মদ্যপান করলে
  •  পায়খানা নরম করার ঔষধ অতিরিক্ত খেলে
  •  বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
  •  হাইপার থাইরয়েডিজম থাকলে
  •  ক্যান্সার বা অন্য কোন কারণে রেডিওথেরাপি নিলে
  •  পেটের কোন সার্জারি করার পর
  •  ডায়াবেটিস থাকলে
  •  আপনার যে খাবারে এলার্জি আছে সেটা খেলে।

 লক্ষণ সমূহঃ

  •  পাতলা পায়খানা হওয়া
  •  পানির মত পায়খানা হওয়া
  •  পায়খানা আটকে রাখতে না পারা
  •  পেটে ব্যাথা
  •  পেট ফুলে যাওয়া

 খুব খারাপ ধরনের  ডায়রিয়া হলে-

  •  পায়খানার সাথে রক্ত আসা
  •  ওজন কমে যাওয়া
  •  শরীরে জ্বর আসা

 যখন আপনার ডায়রিয়া হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার স্যালাইন অন্যান্য তরল খাবার না খেলে আপনি পানিস্বল্পতায় ভুগতে পারেন  যা খুবই সিরিয়াস একটি সমস্যা।

কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?

  • বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশন সবার জন্য নিশ্চিত করা
  • সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার গুরুত্ব বিষয়ে সচেতন করা
  •  জন্মের পর থেকেই বাচ্চাদের ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করানো
  •  ছয় মাস পর বাচ্চাদের নির্দিষ্ট পরিপূরক খাবার শুরু করা
  •  বাচ্চাদের সকল ধরনের টিকা দেয়া
  •  সব ধরনের খাবার ও পানি  ঢেকে রাখা
  •  সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করা
  •  যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করার অভ্যাস পরিহার করা

বাচ্চাদের জন্মের পর বুকের দুধ না খাওয়ালে ডায়রিয়া হওয়ার এবং সেটা থেকে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ১১ গুণ বেড়ে যায়।

 কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

  •  পায়খানার সাথে রক্ত আসলে, পায়খানার রং কালো হয়ে গেলে
  •  খুব বেশি জ্বর হলে
  •  দুই দিনের বেশি ডায়রিয়া থাকলে
  •  ডায়রিয়ার সাথে খুব বেশি বমি থাকলে
  •  পেটে ব্যথা থাকলে
  •  অন্য কোন দেশ থেকে আসার পর ডায়রিয়া হলে।

এছাড়া আপনার ডায়রিয়া থাকা অবস্থায় যদি পানিস্বল্পতার লক্ষণ দেখা যায় তাহলে এক মুহূর্ত দেরি না করে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। লক্ষণ গুলো হলো-

  •  প্রস্রাবের  রং ঘন  হয়ে যাওয়া
  •  প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ব্যাপী ন্যাপী/ডায়পার  শুকনো থাকা (প্রস্রাব না হওয়ার কারনে)।
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
  •  মাথা ব্যথা করে
  •  চামড়া শুকিয়ে যাওয়া
  •  কোন কিছু বুঝতে সমস্যা বা পরিবারের মানুষকে চিনতে না পারা

কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?

চিকিৎসক আপনার কাছ থেকে রোগ বর্ণনা শুনে  এবং বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করে দেখবেন। এছাড়াও আপনাকে কিছু টেস্ট  করাতে দিতে পারেন।  বেশিরভাগ ডায়রিয়া ভাইরাসের কারণে হয়। কিন্তু অনেক ডায়রিয়া ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য কারণে হওয়ার কারণে, এর মূল কারণ খুঁজে সে অনুসারে চিকিৎসা করা হয়।

ডায়রিয়ার মূল চিকিৎসা আপনার শরীরের পানিস্বল্পতা পূরণ করা। এজন্য ডায়রিয়ার প্রকার দেখি মুখে খাবার স্যালাইন বা অনেক সময় শিরায়  স্যালাইন দেয়া লাগতে পারে। এজন্য হয়তো কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি  থাকা  লাগতে পারে।  আমাদের দেশে অনেক মানুষ ডায়রিয়া জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে  রাজি থাকেন না। এরকম অবহেলা অনেক গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

আপনি কি করবেন?

  • প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ করুন
  •  প্রতিবার  পায়খানার পর খাবার স্যালাইন পান করুন
  •  নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখুন
  • খুব বেশি দুর্বল লাগলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন
  •  পরিবারের কারও ডায়রিয়া হলে ঘরের সব সময় যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয়, সেগুলো পরিষ্কার রাখুন
  •  বাচ্চাদের খাবার আগে এবং পায়খানা করার পরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার  অভ্যাস গড়ে তুলুন
  •  বাচ্চাদের এবং বড়দের নক সবসময়  ছোট রাখুন
  •  পরিষ্কার পানি পান করুন
  •  পানি ফিল্টার করার আগে ফুটিয়ে নিন
  •  শাকসবজির এবং ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খান।

সতর্কতাঃ

 পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে সেটি সবসময় সিরিয়াসলি নিবেন। এক থেকে দুই দিনের মধ্যে ডায়রিয়া ভালো না হলে সরাসরি হাস্পাতালে নিয়ে যান।

 

লিখেছেন,
ডা কামরুল ইসলাম শিপু
সিনিয়র লেকচারার, মাইক্রোবায়োলজি, নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ
এম এস সি ক্যান্ডিডেট, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজ
দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা, ইউ কে।

এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক বলতে নুন্যতম এম বি বি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।