কোনো খাবার বা অন্যকিছু গিলার সমস্যাকেই চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিসফেজিয়া বলে।
যখন ডিসফেজিয়া সমস্যাটি মৃদু থাকে তখন তরল খাবার খেতে কোন সমস্যা হয়না কিন্তু কঠিন খাবার খেতে হালকা সমস্যা হতে পারে, সমস্যাটি যখন হালকা গুরুতর থাকে তখন তরল খেতে কোন সমস্যা না হলেও রোগী কঠিন খাবার খেতে পারেন না। সমস্যা যখন গুরুতর বা অনেক গুরুতর হয় তখন রোগী কঠিন বা তরল কোন খাবারই ঠিকমত খেতে পারেন না, খাবার খাওয়ার সাথে সাথে মুখ দিয়ে বমির মত খাবারটিই বের হয় আসে, অনেক সময় শ্বাসনালিতে খাবার চলে গিয়ে অ্যাস্পিরেশন নিউমোনিয়া হতে পারে।
কারণঃ সাধারণত ২ ধরনের হয়।
১.ওরোফ্যারিঞ্জিয়াল ডিসফেজিয়া (মুখ থেকে খাদ্যনালীর শুরু পর্যন্ত গিলার সমস্যা)
২.ইসোফেজিয়াল ডিসফেজিয়া (খাদ্যনালী দিয়ে খাবার খাদ্যথলীতে পৌঁছাতে সমস্যা)
ডিসফেজিয়ার লক্ষণঃ
- প্রধান লক্ষণই হলো খাবার গিলতে অসুবিধা বোধ করা।
- গিলার সময় ব্যথা অনুভব করা।
- খাবার গিলা বা পান করার সময় কাঁশি আসা বা শ্বাসরোধ হয়ে যাওয়া অনুভব করা।
- খাবার গিলার সময় উল্টো উপরের দিকে চলে আসা, কখনো কখনো নাকে দিয়েও খাবার বা তরল চলে আসা।
- খাবার গলায় আটকে যাওয়া।
- খাবার সঠিকভাবে চাবাতে সমস্যা হওয়া।
- খাবার গিলার সময় গড় শব্দ হওয়া।
- খাবার খেতে সমস্যা হওয়ায় খাবারের প্রতি অনীহা চলে আসা এবং এতে করে ওজন হ্রাস পাওয়া।
ডিসফেজিয়া কেন হয়ঃ
বিভিন্ন স্নায়ুবিক সমস্যার করণে হয়ে থাকে, যেমন-
- স্ট্রোক
- মাথায় আঘাত
- মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস
- পারকিনসন ডিজিজ
- ব্রেইন টিউমার
- স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া বা ডিমেনশিয়া
ক্যান্সার, যেমন-
- মুখগহ্বরের ক্যান্সার
- ইসোফেজিয়াল বা খাদ্যনালীর ক্যান্সার
- থাইরয়েড ক্যান্সার
তাছাড়াও-
- একালেশিয়া
- স্ক্লেরোডার্মা
- তালুকাটা
- ঠোঁটকাটা
- ইসোফেগাসে প্রদাহ
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- শিশুদের বিকাশ জনিত সমস্যা (সেরেব্রাল পালসি)
- পোলিও
জটিলতা/মেডিক্যাল ইমার্জেন্সিঃ কখনো কখনো খাদ্যনালীর সংকোচন হয়ে যাবার ফলে খাবার খাদ্যনালী হয়ে নিচের দিকে নামতে পারেনা। তখন খাদ্যনালী দিয়ে না নেমে শ্বাসনালী দিয়ে নেমে যায়। শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। যার ফলে অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া হয়, এর জন্য জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হয়।
কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন?
আপনি অথবা আপনার পরিবারের কারো মধ্যে যদি উপর্যুক্ত লক্ষণগুলোর কোন একটি বা একধিক লক্ষণ দেখতেপান তবে প্রাথমিকভাবে হাসপাতালের ইমার্জেন্সীতে কোনো একজন রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। পরবর্তীতে সেই ডাক্তার যদি প্রাথমিকভাবে ডিসফেজিয়া বুজতে পারেন তবে তিনিই আপনাকে নাক, কান, গলা বিভাগে যাবার পরামর্শ দিবেন। নতুবা অন্য কোন রোগের কারণে হলে তিনি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র দিবেন।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক বড় কোনো সমস্যা প্রাথমিক স্টেজেই নির্ণয় হবে। যেমন- খাদ্যনালীর ক্যান্সার থেকে ডিসফেজিয়া হলে। সেক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়েই নির্ণয় হবে।
রোগ শনাক্তকরণে যেই পরীক্ষাগুলো করা হয়ঃ
- খাবার গিলার সমস্যাটি কেন হচ্ছে সেটি নির্ণয় করার জন্য প্রথমেই অ্যান্ডোস্কোপি করে কারণ অনুসন্ধান করার চেস্টা করা হয়।
- ব্যারিয়াম এক্স–রে এর মাধ্যমে খাদ্যনালীর আাকারে পরিবর্তন হয়েছে কিনা দেখা হয়।
- এমআরআই করে সূক্ষ্ম ভাবে মুখ,গলা এবং বুক দেখা হয়।
চিকিৎসাঃ
সঠিক তথ্যাবধানের মাধ্যমে ডিসফজিয়ার সমস্যা থেকে উন্নতির দিকে আনা যায় কিন্তু সব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে তুলা যায় না।
ডিসফেজিয়ার চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-
- স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি– বিশেষ ধরণের ব্যায়াম এবং কৌশলের মাধ্যমে খাবার গিলানো যেতে পারে।
- যেইসব খাবার গিলতে অসুবিধা হয় সেগুলোর পরিবর্তে নরম বা পাতলা জাতিয় পুষ্টিকর খাবার দেয়া।
- নাকের মাধ্যমে নল(ন্যাসোগ্যাসট্রিক টিউব) প্রবেশ করিয়ে খাওয়ানো।
- স্টেন্ট বসানো- খাদ্যনালী সংকোচনের ক্ষেত্রে ধাতব টিউব (পিইজি টিউব) সার্জারীর মাধ্যমে বসিয়ে খাদ্যনালী প্রসারণ করা হয়।
- ডিসফেজিয়ার কারণের উপর ভিত্তি করে ওষুধের মাধ্যমে।
- সার্জারীর মাধ্যমেও সমাধানের পথ খোজা হয়। যেমন- খাদ্যনালীর টিউমারের ক্ষেত্রে।
- এন্ডোস্কোপিক ডিয়ালেটেশানের মাধ্যমেও ডিসফেজিয়ার চিকিৎসা করা হয়।
ডিসফেজিয়া কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা যায় না। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল/ব্যায়ামের মাধ্যমে খাবার গিলানো হয়। তাই পরিবারের সবার উচিত ঐ সকল বিষয়ে তাকে সহায়তা করা। যে ধরণের খাবার গিলতে সহজ হয় সেই সকল খাবার রান্না করা। খাবারের সমস্যার জন্যে যেনো পুষ্টিহীনতায় না ভুগেন সেদিকে খেয়াল রাখা।