বাংলাদেশে ডেঙ্গুজ্বর নামে অধিক পরিচিত এই রোগটি এডিস মশার কামড়ে হয়ে থাকে। গত কয়েক বছরে পৃথিবীব্যাপী এই রোগ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। খুব সাধারণ জ্বর থেকে একটি প্রাণঘাতী রোগে পরিণত হতে পারে এটি। এজন্য ডেঙ্গু সম্পর্কে জানা ও সচেতন থাকা সবার জন্য খুবই জরুরী। বাংলাদেশ প্রধানত ঢাকা শহরে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
লক্ষণঃ
- উচ্চ মাত্রার জ্বর
- মাথা ব্যাথা
- শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে এবং মাংসে ব্যাথা
- চোখের পেছনে ব্যথা
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- পেটে ব্যাথা
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া লাল হয়ে যাওয়া।
সাধারণত জ্বর ও মাথা ব্যাথা এরকম লক্ষণ থাকলে ডেঙ্গু এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দিলে এই রোগ মারাত্মক হতে পারে। এজন্য যারা বিভিন্ন শহর এলাকায় থাকেন এবং ওই সব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলে যেকোনো জ্বর হালকাভাবে নেয়া যাবে না।
ডেঙ্গু কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
ডেঙ্গু হওয়ার পর চিকিৎসা করার চেয়ে প্রতিরোধ করা উত্তম। যেহেতু এটি একটি বিশেষ ধরনের মশার কামড়ে হয়ে থাকে সেহেতু এই মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকা সবচেয়ে ভালো উপায়। এজন্য আপনি যা করতে পারেন-
- বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখুন
- কোথাও পরিষ্কার পানি জমতে দেবেন না। বিশেষ করে ফুলের টবে এবং ছাদে বিভিন্ন পাত্রে পানি জমলে সেগুলো সাথে সাথে পরিষ্কার করুন।
- ডেঙ্গু সিজনে বাড়িতে মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমান
- ডেঙ্গু মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। এজন্য দিনে কমাতে হলে মশারির নিচে ঘুমান অথবা মশার কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করুন।
- বাইরে যাওয়ার সময় ফুল হাতা জামা পরুন।
- যাদের বাসার আশেপাশে বেশি মশা তারা জানালায় নেট লাগাতে পারেন।
ডেঙ্গু হলে কি করবেন?
- প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার পান করুন।
- বিভিন্ন শাক সবজি ও পুষ্টিকর খাবার খান ।
- ডেঙ্গু হলে মশারির নিচে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। কারণ পুনরায় ডেঙ্গু মশা কামড়ালে আরো বেশি জটিলতা দেখা দিবে।
- নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে যান।
- নিজে থেকে কোন ঔষধ খেতে যাবেন না।
চিকিৎসক কি করবেন?
সাধারণত আপনার লক্ষণ গুলো বর্ণনা শুনে, আপনাকে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করে চিকিৎসক আপনার ডেঙ্গু জ্বর আছে কিনা বলতে পারেন। এছাড়াও কিছু টেস্ট করা খুবই জরুরী। কোন কোন ক্ষেত্রে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এজন্য আপনার চিকিৎসক আগে থেকেই আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হবার কথা বলতে পারেন।
ডেঙ্গুর কোন নিরাময়ের ঔষধ নেই। এজন্য আপনার যে সকল লক্ষণ দেখা যাবে সেগুলো কমানোর জন্য ঔষধ দেয়া হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন হলে সেখানে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ডেঙ্গুর মারাত্মক রূপঃ
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর অনেক খারাপ আকার ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে সবার খুবই সতর্ক থাকা উচিত। ঢাকায় প্রতিবছরই বেশ কিছু মানুষ ডেঙ্গুজ্বরের এই মারাত্মক অবস্থার কারণে মারা যান। নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো নির্দেশ করে ডেঙ্গু খুবই খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে-
- খুব বেশি পেটে ব্যথা
- বমির সাথে রক্ত আসা
- শরীরের অন্য কোন জায়গা থেকে রক্ত আসা
- চামড়ার নিচে রক্ত আসা
- পেট ফুলে যাওয়া
- কেঁপে কেঁপে ঠান্ডা লাগা
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া
- খুব বেশি দুর্বল লাগা
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
এরকম কোনো লক্ষণ দেখা দিলে, দ্রুততম সময়ে নিকটস্থ হাসপাতালে যান।
সতর্কতাঃ
ডেঙ্গু আমাদের দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। ঢাকা শহরে এই রোগের প্রকোপ বেশি। তাই ডেঙ্গুর মৌসুমে যেকোনো জ্বর হলে ধরে নিতে হবে সেটার ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং সে অনুসারে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।