আমাদের দাঁতে তিনটা স্থর রয়েছে,এনামেল হচ্ছে সবচে বাইরের স্থর,তারপরে রয়েছে ডেন্টিন এবং সবচে ভেতরের অংশে রয়েছে দাঁতের পাল্প বা মজ্জা।
দাঁতের পাল্প বা মজ্জার মাধ্যমে দাঁতে রক্ত ও স্নায়ু সঞ্চালিত হয়ে থাকে। দাঁতের মজ্জায়/পাল্পে প্রদাহ বা ইনফেকশনকে পাল্পাইটিস বলে।
পাল্পাইটিস কেন হয়?
পাল্পাইটিস বিভিন্ন কারনে হতে পারে যেমন-
১.ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে দাঁতের মজ্জায় প্রদাহ এবং ব্যথা হতে পারে যেমন ডেন্টাল ক্যারিস।
২.যান্ত্রিক কারন,
-দূর্ঘটনা জনিত কারনে দাঁতের আঘাত বা ঘর্ষনের ফলে দাঁতের ক্ষয়।
৩.তাপ দ্বারা দাঁতের মজ্জার ক্ষতি।
৪.ক্যামিকাল বা রসায়নিক দ্রব্য দ্বারা দাঁতের ক্ষয়।
পাল্পাইটিসের লক্ষন কি?
১.দাঁতে ব্যথা।
২.ঠান্ডা,গরম বা মিস্টি খাবারে দাঁতে শিরশির অনুভূতি।
৩.ডেন্টাল ক্যারিস বা দাঁতে গর্ত।
৪.জ্বর।
৫.মুখে দুর্গন্ধ।
৬.মুখে অপ্রিতিকর স্বাদ।
৭.লসিকাগ্রন্থি বা লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া।
পাল্পাইটিস এর প্রকারভেদ:
১.একিউট পাল্পাইটিস।
এর মধ্যে রয়েছে,
-রিভারসিবল পাল্পাইটিস।
-ইরিভারসিবল পাল্পাইটিস।
২.ক্রনিক পাল্পাইটিস।
রিভারসিবল এবং ইরিভারসিবল পাল্পাইটিস কি?
রিভারসিবল পাল্পাইটিসঃ
রিভারসিবল পাল্পাইটিসে মজ্জার প্রদাহ/ইনফেকশন সল্প পরিমানে হয়ে থাকে,এবং প্রদাহের কারন নির্মুল করলে মজ্জা তার সুস্থ অবস্থায় ফিরে যায়।
লক্ষন:
১.তীব্র ও ক্ষণস্থায়ী ব্যথা।
২.সাধারণত ঠান্ডা এবং মিস্টি খাবারে দাঁতে শিরশির বা ব্যথা।
এর চিকিৎসা কি?
সাধারণত রিভারসিবল পাল্পাইটিসে প্রদাহের কারন যাচাই করে তা নির্মুল করলে দাঁত সুস্থ অবস্থায় ফিরে যায়।
যেমন যদি দাঁতে ক্যারিস/গর্তের কারনে প্রদাহ হয়ে থাকে তবে তা ফিলিং/ভড়াট করালে ব্যথা কমে যাবে।
ইরিভারসিবল পাল্পাইটিসঃ
দাঁতের মজ্জার প্রদাহ বেশি হওয়ার দরুন মজ্জা আর তার সুস্থ অবস্থায় ফিরে যেতে পারে না।
লক্ষণ:
১.দাঁতে হটাৎ তীব্র,টনটনে অসহ্য ব্যাথা।
২.ব্যথা দীর্ঘ, কয়েক মিনিট থেকে ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
৩.সাধারণত গরম খাবারে শিরশির বা ব্যথা।
৪.সাধারণত রুগী কোন দাঁতে ব্যথা তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না।
৫.ব্যথা কানে বা মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৬.দাঁতে টুকা দিলে দাঁতে ব্যথা অনুভূতি হয়।
৭.মাড়িতে পুজ হতে পারে।
চিকিৎসা:
এক্ষেত্রে দাঁতের মজ্জার চিকিৎসা বা রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
ক্রনিক পাল্পাইটিসঃ
দাঁতের মজ্জার প্রদাহ/ইনফেকশন যদি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় এবং কয়েকদিন পরে পরে ব্যথা ফিরে আসে তবে তাকে ক্রনিক পাল্পলাইটিস বলে।
লক্ষণ:
১.ব্যথা অল্প বা রোগীর সহ্যের ভেতরে হয়।
২.রোগী কোন দাঁতে ব্যথা সেটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারে।
চিকিৎসা:
১.রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট
২.দাঁত তুলে ফেলা যদি দাঁত রাখার অযোগ্য হয়।
কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?
১.প্রতিদিন দুবার ফ্লোরাইডযুক্ত মাজন দিয়ে দাঁত মাজতে হবে।
২.শক্ত টুথব্রাশ ব্যাবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩.দাঁত মাজার ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে উপর থেকে নিচে দাঁত পরিস্কার করতে হবে।
৪.ফ্লস বা ইন্টার ডেন্টাল ক্লিনার ব্যবহার করে দাঁত পরিস্কার রাখতে হবে।
৫.খাবার মধ্যে শর্করাযুক্ত খাবার নির্দিষ্ট মাত্রায় গ্রহণ করুন এবং অতিরিক্ত চিনি, উচ্চমাত্রায় এসিড যুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন।
৬.দন্ত চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যাবহার এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ ও তাপ প্রয়োগে সতর্ক থাকতে হবে।
৭.ছয় মাস অন্তর দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।