From a Doctor

পিঠে ব্যথা বা ব্যাক পেইন এর কারন ও চিকিৎসা

পিঠে ব্যথা বা ব্যাক পেইন এর কারন ও চিকিৎসা

আমাদের দেশে খুবই কমন একটি সমস্যা ব্যাক পেইন। ঘাড় থেকে শুরু করে মেরুদন্ডের একবারে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত মেরুদন্ড বরাবর বা এর আশেপাশে কোন ব্যাথা হলে সেটাকে ব্যাক পেইন বলা যায়। 

কেন হয়?

বেশিরভাগ সময় ব্যাক পেইন ছোটখাট কারনে হয়ে থাকে এবং নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। এরকম বিপদহীন ব্যাকপেইনের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন-

  • আপনার উঠা-বসার সাথে সাথে এই ব্যথা বাড়ে কমে
  • হঠাত করে বা আস্তে আস্তে ব্যথা শুরু হয়
  • চেয়ারে ভুলভাবে বসা বা লম্বা সময় কোমড় বাকিয়ে দাঁড়ানো এবং ভারী কিছু তোলা এই ধরনের ব্যথার কারন হতে পারে।
  • ছোট ইনজুরি যেমন পিঠের মাংসে টান পড়লে বা ছোট কোন লিগামেন্ট ছিড়ে গেলে এই ব্যথা হতে পারে। 
  • এই ধরেন ব্যথা এক থেকে দু সপ্তাহের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। 

অন্য রোগের কারনেঃ যেমন-

  • ডিস্ক প্রলাপ্স (মেরুদন্ডের এক ধরনের ইনজুরি। এটা অনেক সময় খুব ভারী জিনিস তুলতে গিয়ে বা মেরুদন্ডে সরাসরি আঘাত পেলে হয়)
  • সায়াটিকা (মেরুদন্ডের কিছু স্নায়ুতে সমস্যা হলে এটা হতে পারে। এর কারনে পিঠের নিচ দিক ছাড়াও নিতম্ব পায়েও ব্যথা ও শিরশির অনুভূত হতে পারে)
  • অ্যানক্লোজিং স্পনডিলাইটিস  (মেরুদণ্ডের জোড়াগুলোতে ফোলাভাব)
  • স্পনডিলোলিথেসিস  (মেরুদণ্ডের হাড়ের অবস্থান থেকে সড়ে গেলে)

লক্ষনসমূহঃ 

  • ঘাড় থেকে শুরু করে পিঠে মেরুদন্ড বরাবর বা এর আশে পাশে যেকোন ব্যথা।
  • অনেক সময় এই ব্যথা নিতম্ব ও পায়েও ছড়িয়ে পড়তে পারে
  • ব্যথা হালকা থেকে শুরু করে মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে
  • সাধারন ব্যথানাশক ওষুধে ব্যথা কিছুটা কমে
  • নড়াচড়ার সাথে ব্যথা বাড়তে পারে
  • অনেক সময় বসা বা দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়ে

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেনঃ

ব্যাক পেইন বেশিরভাগ সময় সাধারন কারনে হয়ে থাকে যেটা নিজ থেকেই ভালো হবে। তবে মাঝে মাঝে অনেক বড় সমস্যার কারনও ব্যাক পেইন। এজন্য আপনার ব্যথার মাত্রা বুঝে এবং কারন বুঝে ( যেমন আপনি যদি চেয়ারে লম্বা সময় বসার কারনে ব্যক পেইন হয় সেটা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই কিন্তু ভারী কিছু উঠাতে গিয়ে মেরুদন্ডে ‘ক্রাকিং’ সাউন্ড শুনে থাকলে এবং পরবর্তীতে খুব ব্যথা হলে সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।) সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

কিভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়?

  • চিকিৎসক আপনার কাছ থেকে ঘটনাপ্রবাহ (হিস্টরি) জানবেন
  • আপনাকে পরীক্ষা করে দেখবেন
  • কিছু টেস্ট দিতে পারেন প্রয়োজনমতো।
  • রোগ নির্নয় করে চিকিৎসক আপনাকে ওষধ, বিভিন্ন ব্যায়াম ও প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিষ্ট এর কাছে পাঠাতে পাড়েন। সমস্যা বড় কিছু হলে আপনাকে হাড়রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে পারেন। 

এই সমস্যার জন্য একজন এম বি বি এস চিকিৎসকের কাছে যাবেন। তিনি প্রয়োজন হলে হাড়রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করবেন।

আপনি কি করবেন?

সাধারণ ব্যাক পেইনে-

  • হাটা চলা চালিয়ে যান। বেডে শুয়ে থাকলে পেইন আরো বাড়ে।
  • পিঠের বিভিন্ন ব্যায়াম করুন
  • পেইন কিলার মেডিসিন চিকিৎসকের পরামর্শমতো খেতে পারেন ।
  • ব্যাথার জন্য প্রথমে ঠান্ডা ও পরে গরম শেক দিতে পারেন। খেয়াল রাখবেন ঠান্ডা বরফ এবং গরম পানির ব্যাগ কখনো সরাসরি চামড়ায় লাগাবেন না। 

সতর্কতাঃ

নিম্নোক্ত কারনেও ব্যাক পেইন হয় যেগুলো খুব মারাত্মক সমস্যাঃ 

  • মেরুদণ্ডের কোন হাড় ভেঙ্গে গেলে
  • কোন ইনফেকশন হলে
  • কডা ইকুইনা সিন্ড্রোম নামক সিরিয়াস একটি রোগ হলে 
  •  ক্যান্সার যেমন মাল্টিপল মাইলোমা (এক ধরনের অস্থি মজ্জা ক্যান্সার)

এজন্য ব্যাক পেইনের তীব্রতা ও কারন বুঝে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুব জরুরি।