From a Doctor

পেপটিক আলসার ডিজিজ

পেপটিক আলসার ডিজিজ; গ্যাসের ঔষুধে কাজ হবে না!

আলসার শব্দের অর্থ হলো ক্ষত বা ঘা। সুতরাং পেপটিক আলসার হচ্ছে পরিপাকতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত যা পাকস্থলির আবরণ এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে হয়ে থাকে।পরিপাকতন্ত্রে অ্যাসিড বেশি মাত্রায় উৎপন্ন হলে এই রোগ হয়। অন্য দিকে, অ্যাসিডের পরিমাণ ঠিক থাকলেও বিভিন্ন কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। তখন সেই আলসারকে সংক্রমণ ঘটিত আলসার বলে।

পেপটিক আলসার সাধারণত দুধরনের

গ্যাস্ট্রিক আলসারঃ যা পাকস্থলিতে হয়ে থাকে।

-ডিওডেনাল আলসারঃ যা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম ভাগ ডিওডেনামে হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহঃ

 অনেক ক্ষেত্রে আলসার আক্রান্ত ব্যাক্তির কোন লক্ষণ থাকে না।তবে সাধারণ উপসর্গ গুলো হচ্ছে-

  • পেটের উপরের দিকে ব্যাথা
  • বুকজ্বালা
  • বমি বমি ভাব
  • পেট ফুলে থাকা
  • খাওয়ার ঠিক পরপর ব্যাথা বাড়ে(গ্যাস্ট্রিক আলসার)
  • খালি পেটে ব্যাথা বাড়ে(ডিওডেনাম আলসার)

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলসারগুলি গুরুতর উপসর্গও সৃষ্টি করতে পারে।যেমন  –

  • বমি বা রক্তবমি ​​- যা লাল বা কালো রঙের হতে পারে
  • পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া
  • শ্বাস নিতে সমস্যা
  • আলসার থেকে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হতে পারে।সেক্ষেত্রে ব্যক্তির রক্তাল্পতা না হওয়া পর্যন্ত উপসর্গ দেখা দেয় না। রক্তাল্পতার কারনে  লক্ষণগুলি হচ্ছ
  • ক্লান্তি
  • ব্যায়ামের সাথে শ্বাসকষ্ট
  • ত্বকের ফ্যাকাশে রঙ
  • আপাত কারণ না থাকা সত্ত্বেও ওজন হ্রাস
  • ক্ষুধা পরিবর্তন

উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অতিদ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

সাধারণ গ্যাসের সমস্যার লক্ষণগুলি থেকে আমরা পেপটিক আলসার কিভাবে আলাদা করতে পারি?

পেটে ব্যাথার অনেক কারণ আছে। তাই সমস্ত ব্যাথাই আলসার নয়। দীর্ঘদিন ধরে যদি সমস্যা থাকে বা সাধারণ গ্যাসের চিকিৎসা করিয়েও যদি সমস্যা না কমে, সেক্ষেত্রে  বুঝতে হবে পরিপাকতন্ত্রে আলসার হয়েছে। যেকোনো ধরনের সমস্যায়  আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বাজারে চলতি নাম জানা কিছু গ্যাসের ওষুধ (৫ টাকা দামের/৭ টাকা দামের গ্যাসে ঔষুধ!) ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খেলে অনেক সময় এ রোগ আরও খারাপ হতে পারে।

কারণসমূহ

পাকস্থলি একটি শ্লেষ্মা স্তর দিয়ে আবৃত থাকে যা সাধারণত অ্যাসিড থেকে পাকস্থলিকে রক্ষা করে। কিন্তু যদি অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বা শ্লেষ্মার পরিমাণ হ্রাস পায়, তাহলে আলসার তৈরি হতে পারে।

সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ব্যাকটেরিয়া- হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলির শ্লেষ্মার স্তরটি নষ্ট করে ভিতরের স্তরের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে,ফলে আলসার তৈরি হয়।
  • ব্যথা উপশমকারী ওষুধের নিয়মিত ব্যবহার। নির্দিষ্ট কিছু ওভার-দ্য-কাউন্টার এবং ব্যথার ওষুধ যা ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস (NSAID) নামে পরিচিত, পাকস্থলি এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের আস্তরণে প্রদাহ করতে পারে।

ঝুঁকির কারণ

  • ধূমপানঃ  ধূমপান  পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • অতিরিক্ত মদ্যপান করাঃ  অ্যালকোহল পাকস্থলির মিউকাস আস্তরণকে  ক্ষয় করতে পারে এবং এটি পেটের অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়
  • মানসিক চাপ
  • মসলাযুক্ত খাবার মসলাযুক্ত খাবার আলসার সৃষ্টি করে না।কিন্তু যাদের ইতিমধ্যেই আলসার আছে তাদের ক্ষেত্রে জ্বলা বা ব্যাথা বৃদ্ধি করতে পারে।

কাদের বেশি হয়ে থাকে?

আলসার শিশু সহ যেকোন বয়সের মানুষের হতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৬০ বা তার বেশি বয়সের লোকদের মধ্যে হয়ে থাকে। আমাদের দেশে তরুন তরুনী ও মধ্যবয়সীদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়।  মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হয়।

সময়মতো চিকিৎসা না করালে কী হতে পারে?

  • অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ
  • পাকস্থলি ছিদ্র হয়ে যাওয়া
  • পাকস্থলীর পথ সরু হয়ে যাওয়া
  • গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার

প্রতিরোধ

  • সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।  H pylori চুম্বনের মতো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমণ হতে পারে।খাদ্য ও পানির মাধ্যমে H. pylori সংক্রমিত হতে পারে।সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যেমন  ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়া এবং সম্পূর্ণ রান্না করা খাবার খাওয়া উচিত।
  • ব্যথা উপশমকারী ওষুধ সেবনে সতর্কতা অবলম্বন করুন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন।
  • ধূমপান পরিহার করুন
  • অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করুন

রোগ নির্ণয়

আলসার সনাক্ত করতে, ডাক্তার প্রথমে রোগের লক্ষণগুলোর বর্ণনা নিতে পারেন এবং শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেন। সাধারণত এন্ডোস্কোপির সাহায্যে এ রোগ নির্ণয় করা হয়।এছাড়া ডাক্তার প্রয়োজন অনু্যায়ী অন্যান্য পরীক্ষা দিতে পারেন।

চিকিৎসা

পেপটিক আলসারের চিকিৎসা কারণের উপর নির্ভর করে।এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে হলে এন্টিবায়োটিকসহ কয়েকটি ওষুধ  দেয়া হয়।

চিকিৎসায় এ রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়। তাই যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি পেপটিক আলসারে ভুগছেন, তাঁদের উচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া।

 

লিখেছেন,

স্বস্তিকা দেব নাথ 

এম বি বি এস স্টুডেন্ট 

 

 

রিভিউ করেছেন,

এম বি বি এস
এম এস সি ক্যন্ডিডেট, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজ
দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা,ইউ কে