প্যারালাইসিস হলো শরীরের এমন এক অবস্থা যেখানে শরীরের কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ অংশের সঞ্চালন বা নাড়াচাড়া করার ক্ষমতা স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
আমাদের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের একটি কাজ হলো সংকেত প্রেরণের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশের মাংসপেশিসমূহের সঞ্চালন করা। যদি কোন কারণে মস্তিষ্ক এবং মাংসপেশির মধ্যকার কোনো এক জায়গায় সংকেত আদান-প্রদানের কাজ বাধাগ্রস্ত হয় তবে ঐ পেশিতে অনূভুতি এবং সঞ্চালন ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থাকেই প্যারালাইসিস বলা হয়।
উপসর্গগুলো কি কিঃ
প্রধান উপসর্গ হলো শরীরের কিছু অঙ্গ বা সকল অঙ্গ নড়ানোর অক্ষমতা। এটি কোনো ব্যক্তির মধ্যে আস্তে আস্তে বা হঠাৎ দেখা দিতে পারে। আবার লক্ষণগুলো মাঝে মাঝেও প্রকাশ পেতে পারে।
সাধারণত যে অঙ্গগুলোতে অসাড়তা হয়-
- মুখের কোনো অংশ বা সম্পূর্ণ মুখ
- দুই হাত
- পায়ের উপরের অংশ
- এক পায়ের উপরের বা নিচের অংশ (মনোপ্লেজিয়া)
- শরীরের একটা দিক (হেমিপ্লেজিয়া)
- দুই পায়েরই নিচের দিক (প্যারাপ্লেজিয়া)
- দুই হাত এবং দুই পা (টেট্রাপ্লেজিয়া)
প্যারালাইসিসের কারণসমূহঃ
প্রধাণ কারণগুলো হলো-
- প্রধান কারণই হচ্ছে স্নায়ু বা নার্ভাস সিস্টেম অকেজো হয়ে পরা
- মুখের একদিকে হঠাৎ করে দুর্বলতা সাথে হাতেও দূর্বলতা এবং কথা বলতে না পারা বা অসুবিধা হওয়া (স্ট্রোক বা ক্ষণস্থায়ী ইসকেমিক এ্যাটাক/মাইল্ড স্ট্রোক)
- ঘুম থেকে উঠার সময় কিংবা ঘুমাতে যাবার সময় ক্ষণস্থায়ী অসাড়তা (স্লিপ প্যারালাইসিস)
- দুর্ঘটনার কারণে মস্তিষ্কের আঘাত
- হঠাৎ মুখের একপাশ ব্যথার সাথে অবশ হয়ে পরা (বেলস্ পালসি)
প্যারালাইসিসের সাধারণ কারণগুলি হলো-
- মস্তিষ্কে বা মেরুদণ্ডে আঘাত/স্পাইনালকর্ড ইনজুরি
- ব্রেইন স্ট্রোক
- মস্তিষ্কে বা মেরুদণ্ডে টিউমার
- মালটিপল স্ক্লেরোসিস
- মাসকুলার ডিসট্রপি
- পোলিও
- সেরিব্রাল পালসি
- স্পাইনা বাইফিডা
- উচ্চ রক্তচাপ
- ডায়াবেটিস
- ধূ্মপান
- উচ্চ কোলেস্টেরল
- জন্মগত বা বংশগত
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেনঃ
প্যারালাইসিস যেকোনো বয়সেই হতে পারে এবং এর কোনো একটি লক্ষ্মণ দেখা দেয়া মাত্র ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে হয়তো স্থায়ীভাবে প্যারালাইসিস বা শরীরের অসাড়তা থেকে বেঁচে যেতে পারেন।
প্যারালাইসিস নির্ণয় পদ্ধতিঃ
প্রাথমিকভাবে প্যারালাইসিস উপসর্গ দেখে নির্ণয় করা হয়। বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে কি ধরণের প্যারালাইসিস হয়েছে তা ডাক্তার নির্ণয় করেন।
মস্তিষ্কে বা মেরুদণ্ডে এমআরআই, সিটিস্ক্যান করে বর্তমান অবস্থা দেখেন এবং সমস্যার কারণ উদঘাটন করেন। এছাড়া অন্যন্য শারীরিক সমস্যা দেখার জন্য বেশ কিছু টেস্ট করা লাগতে পারে।
কিভাবে চিকিৎসা করা হয়ঃ
প্যারালাইসিসের জন্যে নির্দিষ্টভাবে কোনো ওষুধ দেয়া হয়না। তবে যেই কারণের ফলে অসাড়তার সৃষ্টি তার চিকিৎসা করা হয়। তাছাড়া প্যারালাইসিসের ফলে ব্যথা থাকলে তার জন্যে ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হয়।
ওষুধ ছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসা করা হয়-
- ফিজিওথেরাপিঃ প্যারালাইসিস রোগীদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে রিহেবিলিটেশন বা পুনর্বাসন করা হয়। এতে করে সম্পূর্ণ বা কিছু উন্নতির মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরা যায়। একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের মাধ্যমে অসাড় হয়ে যাওয়া অঙ্গে থেরাপি দেয়া হয় যাতে করে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, পেশির জোর বাড়ে এবং পেশিতে অনূভুতি সৃষ্টি হতে সহায়তা করে।
- চলাচলে সহায়ক উপকরণঃ হুইলচেয়ার বা স্ট্রেচারের মাধ্যমে চলাচলে সহায়তা পাওয়া যায়।
- কাজের মাধ্যমে থেরাপিঃ দৈনন্দিন কাজ করার মাধ্যমে পেশিকে সক্রিয় রাখা যায়, এতে করে অসাড়তা বাড়েনা।
আপনি কি করবেন?
- দৈনিক অন্তত ৩০মিনিট হাঁটা বা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের পেশিসমূহকে সক্রিয় এবং মনকে প্রফুল্ল ও সতেজ রাখা যায়। এতে করে প্যারালাইসিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
- দুশ্চিন্তা পরিহার করা
- পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ ও ভিটামিন জাতীয় খাবার খাওয়া। এতে করে মাংসপশি গঠনে সহায়তা হয়।
প্যারালাইসিসের ফলে মানুষ অনেক সময় কর্মহীন হয়ে পরে। সাধারণ জীবন যাপন করতে পারেন না। তাই পারিপার্শ্বিক সকলের উচিত সেই ব্যক্তিকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়া এবং তাকে হাল ছেড়ে না দিতে উৎসাহিত করা। মানসিক শক্তি ছাড়া এই শারীরিক সুস্থতা কাঠিয়ে উঠা বেশ কঠিন। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সকলের এই দায়িত্ব নিতে হবে।
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত ও সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক বলতে নুন্যতম এম বি বি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।