ফেব্রাইল কনভালশন হল শিশুদের জ্বরজনিত খিঁচুনি বা জ্বরখিচুনি, যা সাধারণত ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ঘটে। এটি মস্তিষ্কের সাময়িক অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক ক্রিয়ার কারণে হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একবার ঘটে এবং এটি মৃগী রোগ (Epilepsy) না।
ফেব্রাইল কনভালশনের সুনির্দিষ্ট কারণ পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে সাধারণত উচ্চ জ্বর এবং সংক্রমণের কারণে এটি হয়। কিছু সাধারণ কারণ নিম্নরূপ—
- ভাইরাল সংক্রমণ: ইনফ্লুয়েঞ্জা, রোটা ভাইরাস এবং অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণ এটি ঘটাতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: মধ্যকর্ণের সংক্রমণ (Otitis Media), নিউমোনিয়া বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণও ট্রিগার করতে পারে।
- টিকাদান পরবর্তী জ্বর: কিছু টিকা (যেমন MMR ভ্যাকসিন) গ্রহণের পর হালকা জ্বর হতে পারে, যা কিছু শিশুর মধ্যে খিঁচুনি ঘটাতে পারে।
- পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারের কারো ছোটবেলায় ফেব্রাইল কনভালশন হয়ে থাকে, তবে শিশুরও এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ধরণ
ফেব্রাইল কনভালশন দুই ধরনের হতে পারে—
- সাধারন (Simple Febrile Convulsion):
- সাধারণত ১৫ মিনিটের কম সময় ধরে স্থায়ী হয়।
- শরীরের দু’পাশে সমানভাবে খিঁচুনি হয়।
- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুনরাবৃত্তি হয় না।
- কোনো নিউরোলজিক্যাল সমস্যা সৃষ্টি করে না।
- জটিল (Complex Febrile Convulsion):
- ১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়।
- শরীরের একপাশ বেশি প্রভাবিত হয়।
- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একাধিকবার হতে পারে।
- শিশুর নিউরোলজিক্যাল সমস্যা থাকতে পারে।
লক্ষণসমূহ
ফেব্রাইল কনভালশনের সময় শিশুর মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে—
✔ শরীর শক্ত হয়ে যাওয়া এবং হাত-পা কাঁপানো
✔ চোখ উল্টে যাওয়া
✔ জ্ঞান হারানো
✔ শ্বাসকষ্ট বা মুখ নীলচে হয়ে যাওয়া
✔ প্রস্রাব বা মলত্যাগের নিয়ন্ত্রণ হারানো
খিঁচুনির পর শিশু ক্লান্ত বা বিভ্রান্ত বোধ করতে পারে, তবে সাধারণত তারা দ্রুত সেরে ওঠে।
কী করবেন এবং কী করবেন না?
✅ যা করবেন:
- শিশুকে নিরাপদ স্থানে রাখুন এবং শরীরের একপাশে কাত করে শুইয়ে দিন।
- মুখের ভেতর কিছু ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না।
- ঠান্ডা পানি ঢেলে দেওয়া বা জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করবেন না।
- খিঁচুনির সময় হিসাব রাখুন এবং লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করুন।
- খিঁচুনি ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে দ্রুত হাসপাতালে যান।
❌ যা করবেন না:
- মুখে কিছু দেওয়া (যেমন চামচ, ওষুধ, পানি)
- শিশুকে জোর করে ধরে রাখা
- কাঁপুনি থামানোর চেষ্টা করা
জটিলতা ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
সাধারণত ফেব্রাইল কনভালশন গুরুতর কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বারবার ঘটে, তাহলে পরবর্তী জীবনে কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে—
- বারবার খিঁচুনির ঝুঁকি বৃদ্ধি
- মৃগী হওয়ার সম্ভাবনা (তবে বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রে এটি ঘটে না)
- জটিল কেসে মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে
চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফেব্রাইল কনভালশন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
- জ্বর নিয়ন্ত্রণ: প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন দিয়ে জ্বর কমানো যেতে পারে।
- সংক্রমণের চিকিৎসা: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।
- পর্যবেক্ষণ: দীর্ঘস্থায়ী খিঁচুনি হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে।
প্রতিরোধ ও করণীয়
- শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা
- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য নিয়মিত হাত ধোয়া
- শিশুদের টিকাদান সম্পন্ন করা
- জ্বর হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া
ফেব্রাইল কনভালশন শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ জ্বরজনিত খিঁচুনি যা সাধারণত বিপজ্জনক নয়। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করে না এবং শিশুর মস্তিষ্কের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে, দীর্ঘস্থায়ী বা জটিল খিঁচুনি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বাবা-মায়েদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, তারা আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেন এবং শিশুদের নিরাপদ রাখেন।
সূত্র (References)
- National Health Service (NHS). Febrile Seizures. https://www.nhs.uk/conditions/febrile-seizures. Accessed February 2025.
- American Academy of Pediatrics (AAP). Febrile Seizures: Clinical Practice Guideline. Pediatrics. 2011;127(2):389-394.
- WebMD. What is a Febrile Seizure? https://www.webmd.com/children/guide/febrile-seizures. Accessed February 2025.
- National Institute of Neurological Disorders and Stroke (NINDS). Febrile Seizures Fact Sheet. https://www.ninds.nih.gov. Accessed February 2025.
- Mayo Clinic. Febrile Seizures: Symptoms & Causes. https://www.mayoclinic.org. Accessed February 2025.
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত ও সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক বলতে নুন্যতম এম বি বি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।