From a Doctor

বন্ধ্যাত্ব কেন হয় কখন চিকিৎসা জরুরী

বন্ধ্যাত্ব ; কেন হয়, কখন চিকিৎসা জরুরী

সন্তানের মাতা-পিতা হওয়া প্রত্যেক বিবাহিত দম্পতির ঐকান্তিক বাসনা। সাধারণ ভাষায় সন্তান জন্ম দিতে না পারা কে বন্ধ্যাত্ব বলে ।

মেডিক্যালের ভাষায়, যদি কোন রকম প্রতিরোধক ব্যবস্থা ছাড়াই স্বামী ও স্ত্রীর নিয়মিত ১ বছর মেলামেশার পরেও সন্তান ধারণে সক্ষম না হন তাকে বন্ধ্যাত্ব বলে । ৮০% দম্পত্তি বিয়ের প্রথম বছরেই সন্তান ধারণে সক্ষম হয়, ১০% দম্পত্তি বিয়ের প্রথম ২ বছরেই সন্তান ধারণে সক্ষম হয় আর বাকি ১০% বিয়ের ২ বছর পরও সন্তান ধারনে ব্যর্থ হন।

প্রকারভেদঃ
বন্ধ্যাত্বকে ২ ভাবে ভাগ করা যায়:-
১.প্রাথমিক বন্ধ্যাত্ব: যখন কোন মহিলার কখনোই গভধারণ হয় নি।
২.সেকেন্ডারী বা অর্জিত বন্ধ্যাত্ব: অতীতে কখনও গর্ভধারণ হয়েছিল কিন্তু পুনরায় গর্ভধারণে সক্ষম হয়নি।
কারনঃ
পুরুষ সরাসরি ৩০-৪০%,নারী ৪০-৫০% এবং উভয় ১০ % বন্ধাত্বের জন্য দায়ী।
গর্ভধারনের জন্য দরকার একটি সুস্থ ওভাম (ডিম), সবল বীর্য, নরমাল ইউটেরাস বা জরায়ু এবং নরমাল পেলভিক এ্যানাটমি। এর যেকোন জায়গায় সমস্যা হলে গর্ভধারণে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।
নারী বন্ধাত্ব্যের প্রধান কারন গুলো হচ্ছে-
১। এনুভলেশন (ডিম্বাশয় থেকে ওভাম বা ডিম নিঃসরণ না হওয়া)
২। জরায়ুর জন্মগত ত্রুটি বা টিউমার।
৩।ডিম্বনালীর বন্ধ(block) হয়ে যাওয়া (ইনফেকসনের জন্য)।
৪।পেলভিক এন্ডোম্যাট্রিওসিস নামক রোগ।
ওভুলেসন বা ডিম্বস্ফুটন না হওয়ার কিছু কারণ:
• পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম(PCOS)
• হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ। কিছু কিছু হরমোন যেমন প্রলেক্টিন, থাইরয়েড হরমোন অথবা পিটুইটারি FSH, LH হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ ওভুলেশন ব্যাহত করে।
• শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী বা কম থাকা।
• প্রিমেচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউর
• অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
• অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার কিংবা কিডনি রোগেও ওভুলেশন ব্যাহত হতে পারে।
• কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি সাময়িক বা পরোপুরিভাবে ওভারিকে অকার্যকর করে দিতে পারে।
• ধূমপান, অথবা অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান।
মেল (পুরুষ) ফ্যাক্টর/কারন:
প্রতি একশত জনের মধ্যে ৩০-৪০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
• শুক্রাণু বা বীর্য যথেষ্ট গতিশীল না হলে বা অস্বাভাবিক গঠনগত কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে(oligospermia,azoospermia,asthenospermia)
• কোনো কারণে শুক্রাণু তৈরী ব্যাহত হলে, যেমন জিনগত ত্রুটি, ভেরিকোসেলি, টেস্টিসের টিউমার বা ইনফেকশন অথবা কোন ঔষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াজনিত কারণে নরমাল শুক্রাণু তৈরী বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
এক বছর বা এর বেশি সময় ধরে কোন রকম জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ছাড়া সন্তান ধারণে ব্যর্থ হলে অবশ্যই যে কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নিতে হবে। তবে বয়স ৩৫ এর অধিক থাকলে ৬ মাস চেষ্টা করে যদি ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অতি জরুরী।
পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের হার বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়। ৩৫ বছরের পর থেকে মেয়েদের ওভুলেশনের হার কমতে থাকে, একইসাথে শুক্রাণুর কার্যকারিতাও বয়সের সাথে সাথে কমে। তাই এই চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সাফল্যের হারও কমে যায়।
তাই বন্ধ্যাত্ব হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

লিখেছেন,
ডা. হিমাংশু দাস সৌম্য
এমবিবিএস, এফসিপিএস
সহকারী অধ্যাপক
গাইনী ও অবস্ বিভাগ
পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়