From a Doctor

বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানোর উপকারিতা

দৃশ্য ১: সাবিনা (ছদ্মনাম) একজন নব্য মা। নিজের সদ্যজাত সন্তান কে বুকের দুধ দিতে গিয়ে খেয়াল করলেন সন্তান তার স্তন খুজে নিচ্ছে না। কখনো এমন, যেন সে চিনতেই পারছে না । কিছুদিন চেষ্টার পর আশাহত হয়ে সাবিনা বাধ্য হয়েই কৌটার দুধের দিকে ঝুঁকতে হয়, কারন প্রয়োজনীয়তা টা তখন নবজাতকের ক্ষুধা নিবারনের সাথে জড়িত।

দৃশ্য ২:  লিজার ( ছদ্মনাম) পরিবারে আনন্দের বন্যা। ২ মাস হলো তাদের কোল আলো করে সংসারে এসেছে নতুন অতিথি।  শিশুটিকে  নিয়ে সবাই যখন আনন্দে মেতে আছে্‌ অন্যদিকে লিজার ভেতরে এক অপ্রকাশিত  উৎকণ্ঠা সমানভাবে বেড়ে চলেছে। ক্রমশ, তার মনে হতে লাগে- সন্তান যেন পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে না।

উপরোক্ত দুটি ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে নবজাত-র  মায়ের ক্ষেত্রে। ঘটনাগুলো কেবল আমাদের দেশেই নয়,বরং বহির্বিশ্বেও অহরহ দেখা যায়, যখন একজন মা তার সন্তান কে বুকের দুধ পান করাতে গিয়ে মুখোমুখী হন অনেক নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতার।  এসবের মধ্যে জন্ম পরবর্তী ধকল জনিত  দুধ উৎপাদনের  স্বল্পতা যেমন আছে, তেমনি সঠিক নিয়মে খাওয়াতে সফল না হওয়ার কারনে শিশু কম দুধ পেতে পারে।

উপরন্তু, মায়ের স্তনের বোঁটা শিশুর চিনতে না পারা  কিংবা  মায়ের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাও পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনে  এবং শিশুর দুধ গ্রহনে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাড়ায়। যে সকল মায়েদের এধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তারা প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নিতে পারেন।

একটি শিশুকে জন্মের ১ম ছয় মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ নিশ্চিত করতে এবং তার পরবর্তী (১ থেকে ২ বছর) দুগ্ধ দান করতে (অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি) মায়ের সঠিক পুষ্টি গ্রহণ অতি আবশ্যক ও বাধ্যতামূলক ভাবে জরুরী । পর্যাপ্ত সুষম  খাদ্য এবং পানি গ্রহনে একজন মা তার শিশু কে দুগ্ধ পান করাতে সক্ষম হতে পারেন।

দুশ্চিন্তামুক্ত থেকে সঠিক উপায়ে শিশু কে প্রতি ২-৩ ঘন্টা পরপর ধৈর্য্য সহকারে উভয় স্তন পান করালে শিশুটির পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করা যায় এবং তার সঠিক ওজন বৃদ্ধি ঘটে। এক্ষেত্রে, শিশুটির যদি প্রতিদিন অন্তত ৬ বার ডায়পার বদল করতে হয় তাহলে মা কে বুঝতে হবে তার শিশু পর্যাপ্ত পরিমান দুধ পাচ্ছে। এটি পরবর্তীতে মা ও শিশু  উভয়েই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে এবং মায়ের সাথে শিশুর বন্ধন কে আরো দৃঢ় করবে ।

মায়ের দুধ একটি শিশুর জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য ও বিকল্পহীন খাদ্য । এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমরা বৃদ্ধি পাশাপাশি সঠিক পুষ্টির যোগান নিশ্চিত করে এবং বুদ্ধিমত্তা বিকাশে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে। একজন মা তার শিশুকে দুধ পান  করালে তার নিজেরও নানাভাবে উপকৃত হন । উদাহরনস্বরূপ, শিশুর দুধ-পান মায়ের জরায়ু কে গর্ভবতী হবার পূর্বাবস্থায় ফিরতে  সাহায্য করে, স্থূলতা ( মা ও শিশুর উভয়ের) রোধ করে, ডিম্বাশয় কিংবা স্তনের ক্যান্সার রোধ করে এবং গর্ভনিরোধক হিসেবেও কাজ করে ।

লিখেছেন-
ডাঃ  তপাগ্নী চক্রবর্তী
এমবিবিএস,
এম পি এইচ (জনস্বাস্থ্য বিষয়ে অধ্যয়নরত)
স্কুল অব পাবিলক হেলথ,
ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা, কানাডা

আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়