বিষণ্ণতা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এটা কেবল খারাপ লাগা বা মন খারাপ থাকা নয়। বিষণ্ণতা আপনার অনুভূতি, চিন্তা এবং কাজকর্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সময় মতো চিকিৎসা না করালে এটি দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে।
বিষণ্ণতার কারণ :
বিষণ্ণতার নির্দিষ্ট কোনো একটি কারণ নেই। বিভিন্ন কারণে এটি হতে পারে, যেমন:
- জেনেটিক কারণ: পরিবারের কারো বিষণ্ণতা থাকলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- শারীরিক কারণ: মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতা (যেমন সেরোটোনিন, ডোপামিন) বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে।
- মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, প্রিয়জনের মৃত্যু, চাকরি হারানো বা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া বিষণ্ণতা বাড়াতে পারে।
- শারীরিক অসুস্থতা: কিছু শারীরিক অসুস্থতা, যেমন থাইরয়েড সমস্যা বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, বিষণ্ণতা সৃষ্টি করতে পারে।
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন: বড় ধরনের পরিবর্তন, যেমন স্থান পরিবর্তন বা নতুন চাকরি, বিষণ্ণতা ডেকে আনতে পারে।
বিষণ্ণতার লক্ষণ :
বিষণ্ণতার লক্ষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মনের অবস্থা: একটানা মন খারাপ থাকা, হতাশা, কান্নাকাটি করা।
- আগ্রহের অভাব: আগে যে কাজ করতে ভালো লাগত, সেগুলোতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
- ক্লান্তি: সবসময় ক্লান্ত লাগা এবং শক্তি না পাওয়া।
- ঘুমের সমস্যা: ঘুম না আসা অথবা অতিরিক্ত ঘুমানো।
- খাওয়ার সমস্যা: ক্ষুধা কমে যাওয়া অথবা অতিরিক্ত খাওয়া।
- মনোযোগের অভাব: কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া।
- নিজেকে মূল্যহীন মনে করা: নিজের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়া এবং অপরাধবোধে ভোগা।
- মৃত্যুর চিন্তা: বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেলা এবং আত্মহত্যার চিন্তা করা।
- শারীরিক লক্ষণ: মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা বা হজমের সমস্যা।

যদি এই লক্ষণগুলো দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কখন ডাক্তার দেখাবেন :
যদি আপনার মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো দেখা যায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
- বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে।
- আপনি আত্মহত্যার চিন্তা করছেন।
- আপনার মনে হচ্ছে জীবন অর্থহীন।
- আপনার পরিবার বা বন্ধুদের মনে হচ্ছে আপনার সাহায্য প্রয়োজন।
চিকিৎসা :
বিষণ্ণতার চিকিৎসা সাধারণত ওষুধ এবং থেরাপির মাধ্যমে করা হয়।
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সামাজিক কার্যকলাপের মাধ্যমে বিষণ্ণতা কমানো যায়।
- থেরাপি: সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মানসিক চাপ মোকাবেলা করা এবং নেতিবাচক চিন্তা দূর করা যায়। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT) বিষণ্ণতার চিকিৎসায় খুবই কার্যকর
- ওষুধ: এন্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ মস্তিষ্কের রাসায়নিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।
নিজেকে সাহায্য করুন :
চিকিৎসার পাশাপাশি, আপনি নিজেও কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন:
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- প্রচুর ফল, সবজি এবং শস্য জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন।
- বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।
- শখের কাজ করুন এবং নিজের জন্য সময় বের করুন।
- মদ ও মাদক পরিহার করুন, এগুলো বিষণ্ণতা বাড়াতে পারে।
বিষণ্ণতা একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। সঠিক চিকিৎসা এবং নিজের চেষ্টায় আপনি সুস্থ জীবন ফিরে পেতে পারেন।
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত ও সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।