From a Doctor

ব্রণ বা একনি; কারন ও ভালো থাকার উপায়

ব্রণ বা একনি (Acne) একটি প্রচলিত ত্বকের সমস্যা যা প্রায় সবারই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে হয়ে থাকে। এর ফলে ত্বকে লাল, কালো বা সাদা দাগ দেখা যায় যাতে কিছু ক্ষেত্রে স্পর্শ করলে ব্যাথা হয়ে হতে পারে আবার কখনো ব্রণের সাথে ত্বক তৈলাক্ত হতে পারে। 

লক্ষণসমূহ

ব্রণ সাধারণত ৬ রকমের হয়ঃ

  • ব্ল্যাকহেডসঃ ত্বকে ছোট ছোট কালো বর্ণের গোঁটা হওয়া ,এক্ষেত্রে ত্বকের ছিদ্র খোলা থাকে । 
  • হোয়াইটহেডসঃ ত্বকে সাদা বর্ণের গোঁটা হওয়া, এক্ষেত্রে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ থাকে ।

acne vulgaris ব্রন

ছবিঃ Acne Vulgaris, Source:DermNetnz.org

  • পেপিউলসঃ ছোট লাল গোঁটা হওয়া যাতে স্পর্শ করলে বা চাপ দিলে ব্যাথা অনুভূত হয়।
  • পিম্পলস/পুসটিউলসঃ এগুলো পেপিউলসের মত, কিন্তু কেন্দ্রে সাদা পুঁজ এর ডগা থাকে ।
  • নোডিউলসঃ ত্বকের নিচে বেদনাদায়ক বড় ও শক্ত পিন্ড হওয়া । 

NOdulocystic acne

ছবিঃ Nodulocystic acne. Source: DermNetnz.org

  • সিস্টঃ সবচেয়ে মারাত্মক ব্রণ হল সিস্ট । এগুলো বড় ফোঁড়ার মত দেখতে হয় এবং পুঁজভর্তি থাকে । সিস্টে স্থায়ী ক্ষত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

ব্রণ সাধারণত দেহের নিম্নোক্ত জায়গায় হয়ে থাকেঃ

  • মুখমন্ডলঃ ব্রণ হবার সবচেয়ে কমন জায়গা হল মুখমন্ডল । বেশিরভাগ মানুষের-ই মুখমন্ডলের ত্বকে ব্রন হয়ে থাকে।
  • পিঠঃ ব্রণ হবার দ্বিতীয় কমন জায়গা হল পিঠ। সাধারণত ব্রণে আক্রান্ত অর্ধেকের বেশি মানুষের পিঠে ব্রণ হয়।
  • বুকঃ ব্রণে আক্রান্ত ১৫% মানুষের বুকে ব্রণ হয়।

কাদের হয়?

ব্রন সব বয়সী মানুষের হয়। তবে কিশোর কিশোরিদের ব্রন বেশি হয়ে থাকে। সাধারনত ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সের মেয়েদের মধ্যে এবং ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়

কেন হয়?

ব্রণ সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে হরমোন এর মাত্রা পরিবর্তনের সাথে জড়িত, তবে যে কোনো বয়সেই ব্রন হতে পারে

  • কিছু হরমোন চুলের গ্রন্থিকোষ (হেয়ার ফলিকল) এর  অভ্যন্তরের আস্তরণকে আরও ঘন করে তোলে, যার ফলে ত্বকের ছিদ্র (Pores) বন্ধ হয়ে যেতে পারে ।  
  • আবার কিছু হরমোন ত্বকের সেবাশিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে সেবাম (একটি তৈলাক্ত, মোমের মত পদার্থ) সৃষ্টির পরিমাণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়িয়ে ফেলে । এই অত্যাধিক সেবামের জন্য ত্বকে থাকা “Cutibacterium acnes” নামের একটি ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়াকলাপে পরিবর্তন আসে যার জন্য প্রদাহ ও পুঁজ তৈরি হতে পারে ।

অন্যান্য-

  • ব্রণ এর সাথে পরিবারের ইতিহাস ও সংশ্লিষ্ট আছে । দেখা যায় ,বাবা মায়ের ব্রন হবার প্রবনতা থাকলে সন্তানেরও ব্রণ হয়ে থাকে ।
  • ঋতুস্রাব বা গর্ভাবস্থার সময় হরমোনের পরিবর্তনের জন্য ব্রন হতে পারে।
  • ডায়েটঃ কিছু স্টাডি ইঙ্গিত দেয় যে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ কিছু খাবার ব্রণ হবার পিছনে কারন হিসেবে কাজ করতে পারে । কিন্তু খাবারের  সাথে ব্রণের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সুস্পষ্ট প্রমান এখনো পাওয়া যায় নি।
  • দুশ্চিন্তাঃ শুধুমাত্র দুশ্চিন্তার জন্য ব্রণ হয় না, কিন্তু ব্রণ হয়ে থাকলে দুশ্চিন্তার জন্য তা বাড়তে পারে । 
  • কর্মক্ষেত্রে কিছু রাসায়নিকের সংস্পর্শে বিশেষত হ্যালোজেনেটেড হাইড্রোকার্বনের প্রভাবে ব্রণ হতে পারে
  • মেয়েদের পলিসিস্টিক অভারি সিনড্রোম এর জন্যও অত্যাধিক ব্রন হতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে আরো অন্যান্য লক্ষন বেশি উল্লেখযোগ্য।
ব্রণ হলে কি করবেন?
  • ব্রণযুক্ত ত্বক দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি (সাধারনত দুবারের বেশি) ধুবেন না । ধোবার সময় নাতিশীতোষ্ণ বা হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন । অত্যাধিক ঠান্ডা বা গরম পানি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর । 
  • ধোয়ার সময় হালকা সাবান/ফেসওয়াস ব্যবহার করুন । বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্রণের অবস্থা আরো খারাপ করে দিতে পারে ।
  • পরিষ্কার শুকনো টাওয়েল ব্যবহার করুন । 
  • ব্রণ বেশি ঘষামাজা করে উঠানোর চেষ্টা করবেন না । এতে করে স্থায়ী ক্ষত হবার সম্ভাবনা থাকে ।
  • ত্বকে বিশেষ করে ব্রণের উপর অত্যাধিক মেকআপ সামগ্রী ব্যবহার করবেন না । এতে করে ত্বকের ছিদ্র ব্লক হয় যার ফলে ব্রন আরো বেড়ে যায় । ঘুমানোর আগে অবশ্যই মেকআপ ভাল করে পরিষ্কার করে ঘুমাবেন ।
  • ব্যায়াম বা গরমের জন্য ঘাম হলে তা বেশি সময় সেভাবে রাখবেন না । তাড়াতাড়ি ধুয়ে পরিষ্কার করুন ।
  • পর্যাপ্ত ঘুম, হাসিখুশি মন এবং নিয়মিত ব্যায়াম ব্রন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে । তবে এ বিষয়সমূহের সাথে ব্রণের সরাসরি যোগসূত্র পাওয়া যায় নি ।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

বয়ঃসন্ধিকালে ব্রন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এজন্য অতিরিক্ত দুঃচিন্তা না করে উপরে বর্ণিত টিপসগুলো মেনে চলবেন। এরপরেও যদি না কমে কিংবা ব্রন অত্যদিক বেড়ে যায় তাহলে একজন স্কিন বিশেষজ্ঞের (ডার্মাটোলজিস্ট) এর সাহায্য নিন।

মধ্যবয়সে বা বয়স্কদের ব্রন হলে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। 

চিকিৎসা

চিকিৎসা নির্ভর করে আপনার কোন ধরনের ব্রন হয়েছে এবং সেটা কতোটুকু জায়গাজুড়ে বা কতোটা গভীরে গিয়েছে সেটার উপর। এছাড়া অনেক তরুন-তরুনী ব্রণের কারনে দুঃচিন্তায় ভোগেন। তাদেরও চিকিৎসা নেয়া উচিত। 

সতর্কতা

ব্রনের জন্য বাজারে প্রচলিত কিছু ক্রিম, লোশন বা সাবান ইত্যাদি মারাত্মক স্কিন রিয়েকশন করতে পারে। এর মধ্যে আমাদের দেশের এ ধরনের বেশিরভাগ পন্য মানসম্মত নয়। তাই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ ছাড়া মুখের ব্রনে কিছু দিতে যাবেন না। এতে মুখে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। 

ব্রণ নখ দিয়ে খুচাবেন না। এতে দীর্ঘস্থায়ী দাগ পড়বে। স্পেশালিষ্ট ছাড়া কারো কথায় মুখে কেমিক্যাল বা বাজারি টোটকা চিকিৎসা করতে যাবেন না। 

আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়