From a Doctor

মাথাব্যাথা বা হেডেক

মাথাব্যাথা; রকমভেদ,কেন হয় ও মুক্তির উপায়

আমাদের দেশে খুব প্রচলিত একটি কথা আছে ‘ মাথা থাকলে, মাথাব্যথা থাকবেই’।  প্রায় প্রতিটি মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় মাথা ব্যথার সমস্যায়  ভুগে থাকেন। মাথাব্যথার অনেক ধরন থাকে।  বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা বিভিন্ন রকম লক্ষণ থাকে।  এই আর্টিকেলে আমরা কমন কিছু মাথাব্যাথার বিষয়ে সাধারণ কিছু তথ্য  দেয়ার চেষ্টা করবো।

মাথাব্যথার ধরনঃ

অবাক করা তথ্য হলো, মাথাব্যথা প্রায় ১৫০ ধরনের হতে পারে। এরমধ্যে সবচেয়ে কমন কিছু মাথা ব্যাথা হলো-

টেনশন জনিত মাথা ব্যাথাঃ 

এটি সবচেয়ে কমন। সাধারণত তরুণ-তরুণী এবং মধ্যবয়সীদের বেশি হয়ে থাকে। এই ধরনের মাথাব্যথা হালকা থেকে মাঝারি তীব্রতার হয় এবং আসা যাওয়া করে।  এর সাথে অন্য কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।

মাইগ্রেনঃ  

প্রায় সবাই এ ধরনের মাথাব্যথার  নামের সাথে পরিচিত।  এটি খুবই তীব্র। এ ধরনের মাথাব্যথা হলে রোগীরা প্রায়ই বলেন তাদের মাথার ভেতর  ঘড়ির কাটার টিক টক শব্দের মত তালে তালে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যাথা ৪ ঘন্টা থেকে তিনদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং প্রতিমাসে ১ থেকে ৪ বার এই ব্যথা হতে পারে।মাথা ব্যথার  সাথে অন্যান্য লক্ষণ দেখা যায়। যেমন-

  • আলো বা লাইট সহ্য করতে না পারা
  •  অতিরিক্ত শব্দ সহ্য করতে না পারা
  •  বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  •  খাওয়ার রুচি চলে যাওয়া
  •  মাঝে মাঝে পেটে ব্যাথা অনুভূত হয়

ক্লাস্টার মাথাব্যাথাঃ 

এটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধরনের মাথাব্যথা। চোখের পেছনে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। মনে হবে কেউ দাঁড়ালো কিছু  চোখে ঢুকিয়ে দিয়েছে।  ব্যথা শুরু হলে বেশিরভাগ মানুষ তীব্রতার কারণে দাঁড়াতেই পারে না। একই সাথে চোখ লাল হয়ে যায়, চোখের মনি ছোট হয়ে যায় এবং চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে।

 এই মাথাব্যথাকে ক্লাস্টার বলার কারণ, একবার শুরু হলে দিনে দুই থেকে তিনবার পর্যন্ত হতে পারে এবং এই চক্র দুই সপ্তাহ থেকে তিন মাস পর্যন্ত চলতে পারে। প্রতিবার মাথা ব্যাথা ১৫ মিনিট দেখে তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়। 

হরমোন জনিত মাথা ব্যাথাঃ 

এটি মহিলাদের হয়ে থাকে। সাধারণত মাসিক, গর্ভধারণ এবং মাসিক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার (মেনোপজ) কারণে হরমোনের যে পরিবর্তন হয়,সেটার জন্য এ মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও যারা জন্মনিয়ন্ত্রক পিল খান,  তাদেরও এটি হতে পারে।  অনেকেই মাসিকের সময় এর আশেপাশে মাথা ব্যাথা সমস্যায় ভোগেন, বেশিরভাগ সময় এটি এই ধরনের মাথাব্যথা। 

বজ্রপাতের মতো মাথাব্যাথা বা থান্ডারক্লাপ হেডেকঃ

নামের মধ্যেই এই মাথা ব্যাথা তীব্রতা বোঝা যায়। যাদের এটি হয়, তারা এদিকে তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাথাব্যথা হিসেবে বলে থাকেন। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন-

  • মস্তিষ্কের কোন রক্তনালী ফেটে গেলে অথবা ব্লক হয়ে গেলে
  •  মাথায় আঘাত পেলে; যেমন কোন এক্সিডেন্ট এর পর
  • মস্তিষ্কের রক্তনালী চিকন হয়ে গেলে
  •  রক্তনালিতে প্রদাহ হলে
  •  গর্ভধারণের শেষের দিকে ব্লাড প্রেসার হঠাৎ উঠানামা করলে

 এ ধরনের মাথাব্যথা হলে এটি খুবই সিরিয়াসলি নিতে হবে এবং সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

 মাথাব্যথা কেন হয়?

  • বিভিন্ন রোগের কারণে। যেমনঃ ইনফেকশন, ঠান্ডা লাগা, জ্বর,সাইনোসাইটিস, গলায় ইনফেকশন, কানের ইনফেকশন।
  •  মানসিক চাপ
  •  অতিরিক্ত মদ্যপান
  •  খাবারের নিয়ম। যেমনঃ দুপুর বা রাতের খাবার সময়মতো না খাওয়া।
  •  আপনার আশেপাশের পরিবেশ। যেমনঃ আপনি নিজে ধূমপান করলে বাবা ছাড়া অন্য কেউ ধূমপান করলে, বাসায় পাশে পাশে অতিরিক্ত গন্ধযুক্ত কিছু থাকলে, অতিরিক্ত  শব্দ দূষণ, এবং  আবহাওয়া বদলানোর সময়।
  •  বংশগত কারণে। বিশেষ করে মাইগ্রেন বংশগত কারণে বেশি হয়।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

  • মাথাব্যথা সহ্যের বাইরে চলে গেলে
  •  হঠাৎ করে তীব্র মাথা ব্যথা শুরু হলে
  •  হঠাৎ করে নতুন মাথা ব্যথা শুরু হলে
  •  মাথা ব্যথার সাথে অন্যান্য লক্ষণ যেমন বমি,  জ্বর, চোখ দিয়ে পানি  পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি থাকলে।
  •  মাথায় আঘাত পাওয়ার পর মাথা ব্যথা শুরু হলে
  •  ৫০ বছরের অধিক বয়সী কারো  হঠাৎ মাথা ব্যথা শুরু হলে
  • দীর্ঘদিন ধরে মাথা ব্যথা থাকলে
  •  দীর্ঘদিন ধরে প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন ইত্যাদি জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরও মাথা ব্যথা না কমলে

কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?

 চিকিৎসক প্রথমেই আপনার লক্ষণসমূহ শুনে এবং আপনাকে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করে মাথা ব্যথার ধরন ডায়াগনোসিস করবেন। অনেক সময় কিছু টেস্ট করানো জরুরি হয়ে পড়ে। আপনার কোন ধরনের মাথাব্যথা হয়েছে সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর আপনাকে সে অনুসারে চিকিৎসা দেয়া হবে। মনে রাখবেন এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা এবং খুব তাড়াতাড়ি এর সমাধান সম্ভব নয়। 

আপনি কি করবেন?

  • প্রচুর পানি পান করুন
  •  যেকোনোভাবে রিলাক্স করার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত চিন্তা মাথাব্যথা আরো বাড়িয়ে দেয়।
  •  ঠান্ডা লাগলে ,সর্দি জ্বর হলে  পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন।
  •  প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন। এর বাইরে অন্য কোন ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত খাবেন না। মনে রাখবেন অতিরিক্ত ঔষধ খাওয়া মাথা ব্যাথার অন্যতম একটি কারণ।
  • ধূমপান পরিহার করুন
  •  টেলিভিশন, মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে দিকে একটানা দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন না।
  •  মাথা ব্যথার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ঘুমোতে যাবেন না। এটা মাথাব্যথা আরো বাড়িয়ে দিবে।