বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে নিম্নোক্ত পাঁচটি উপায়ে আপনি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে পারেন।এই করোনা মহামারীর সময়, আমরা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। এরকম একাকীত্ব এবং সামাজিক দূরত্ব আমাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে। সুতরাং, সবার উচিত সচেতনভাবে নিজের, পরিবারের এবং বন্ধু-বান্ধবদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা।
১। মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করুনঃ
বিভিন্ন মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।আপনি যাদের সাথে মিশবেন তারা আপনার সাথে তাদের জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিবে। একই সাথে আপনিও নিজের মনের কথা খুলে বলার জন্য মানুষ পাবেন। খুব কঠিন সময়ে আপনি যেসব মানুষের সাথে সব সময় মেলামেশা করে তারা আপনাকে মানসিকভাবে সহায়তা করতে পারেন, যা খুবই জরুরী।
যদি সম্ভব হয় তবে আপনার পরিবারের সাথে থাকার জন্য প্রতিদিন সময় নিন, উদাহরণস্বরূপ, একসাথে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করুন।
কিভাবে করবেন?
- প্রতিদিন পরিবারের সাথে কিছু সময় কাটান
- সারাদিন টিভি না দেখে, বা মোবাইলে টেপাটিপি না করে পরিবারের বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করতে পারেন
- এই করোনার সময়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ রাখুন
- যখন সময় পাবেন, বন্ধুদের সাথে সময় কাটান
- বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের বিপদে-আপদে তাদের সাহায্য করুন
২।শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন
শারীরিক সুস্থতা,মানসিক সুস্থতা লাভের এটি অন্যতম উপকরণ। এজন্য শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে এবং ফিট থাকলে আপনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে এবং বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি যেমন ডিপ্রেশন বা হতাশাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
কিভাবে?
- সাধারণ ব্যায়াম যেমন হাটাহাটি বা খোলা জায়গায় জগিং করুন
- সাঁতার খুবই ভালো মানের একটি ব্যায়াম যেখানে শরীরের প্রতিটি অংশ কাজ করে
- সাইক্লিং করা শারীরিক এবং মানসিক উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
- ব্যায়াম করার মানে সারাদিন জিম করতে হবে এরকম কিছু না। উপরোক্ত ছোটখাটো ব্যায়াম গুলো শারীরিক সুস্থতার জন্য যথেষ্ট
৩। নতুন কিছু শিখুনঃ
গবেষণা দেখা যে নতুন কিছু শেখা আপনার মানসিক সুস্বাস্থ্যে আরও উন্নতি করতে পারে।
কি শিখবেন?
- আপনার যে বিষয়ে আগ্রহ আছে সেই বিষয়ে নতুন কিছু শিখতে গেলে আনন্দ পাবেন
- রান্না করতে পছন্দ করলে ইউটিউব দেখে নতুন কোন মজাদার রান্না করতে পারেন
- লেখালেখি পছন্দ করলে নিয়মিত লেখার জন্য একটি ব্লগ তৈরি করতে পারেন অথবা একটি জার্নালে লিখে রাখতে পারেন
- বর্তমান সময়ে কম্পিউটার বিষয়ক জ্ঞান খুবই জরুরী। এজন্য বেসিক থেকে শুরু করে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ডাটা এনালাইসিস ইত্যাদি কাজ শিখতে পারেন
- কিন্তু এমন কিছু করতে যাবেন না যেটা আপনি পছন্দ করেন না কিন্তু মনে করছেন এটা শিখলে আপনার লাভ হবে। নিজের ফ্রী টাইমে অপছন্দের জিনিস শিখতে যাওয়া আপনার মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেবে।
৪ ।সামর্থ্য অনুযায়ী দান করুন
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে মানবিক কাজ যেমন অসহায় কে দান করা, যারা খেতে পারছে না তাদেরকে খাবার দেয়া, গাছ লাগানো ইত্যাদি কাজ মানুষকে প্রশান্তি দেয়।
যা করতে পারেনঃ
- প্রথমেই সবচেয়ে ছোট কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি শিখুন। কেউ আপনাকে কিছু দিলে বা কোনভাবে সাহায্য করলে তাকে ধন্যবাদ বলুন।
- বিভিন্ন রক্তদানকারী সংগঠনের সাথে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে পারেন
- বাংলাদেশে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক সংগঠন আছে তাদের কাজে শারীরিকভাবে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারেন
- আপনার কোন বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান থাকলে, বাচ্চাদের বা কলেজ পড়ুয়াদের সে বিষয়ে পড়াতে পারেন।
- এরকম আরো অনেক ছোট বড় জিনিস দান করা যায়। দান করার সময় আর্থিক হতে হবে এরকম কোন কথা নেই।
৫।বর্তমান সময় সম্পর্কে সচেতন থাকুন
অনেকেই নতুন এই কনসেপ্টকে ‘মাইন্ডফুলনেস’ নামে আখ্যায়িত করেন। এর মানে আপনার বর্তমান চিন্তা, মানসিক ও শারীরিক অবস্থা এবং আপনার চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আপনার গভীর সচেতনতা আছে। আপনি এগুলো নিয়ে চিন্তা করেন এবং একই সাথে এই বিষয়গুলো কিভাবে আরো সুন্দর এবং উন্নত করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। এটা করলে আপনার মনে চারপাশে ঘটে যাওয়া খারাপ সংবাদ গুলো কম প্রভাব ফেলবে।
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।