From a Doctor

মাসিকে পেটব্যাথা বা মেন্সট্রুয়াল ক্রাম্প, কারন ও চিকিৎসা

মাসিকে পেটব্যাথা বা মেন্সট্রুয়াল ক্রাম্প, কারন ও চিকিৎসা

অনেক মহিলার মাসিকের ঠিক আগে  এবং মাসিকের সময় তলপেটে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হয়। এটাকে মেন্সট্রুয়াল ক্রাম্প মেডিকেলীয় ভাষায় ডিসমেনোরিয়া বলে। 

কারো কারো ক্ষেত্রে এটি হালকা বিরক্তিকর ব্যাথা থেকে অনেকের তীব্র অসহ্য ব্যাথা হতে পারে।

বিভিন্ন কারনে এই ব্যাথা হতে পারে। ব্যাথার কারনের চিকিৎসা করলে অনেক সময় ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

যেসব মাসিক ব্যাথার কোনো কারন থাকে না সেটা সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং বাচ্চা জন্ম দেয়ার পরে ভালো হয়ে যায়।

কেন হয়?

মাসিকের সময় আপনার জরায়ুর ভিতরের স্তর খসে পড়ে। এজন্য জরায়ু তীব্রভাবে সংকোচিত হয়, যার জন্য ব্যাথা অনুভূত হয়। প্রোস্টাগ্লান্ডিন নামক হরমোন এই সংকোচন করে। এই হরমোন আবার ব্যাথা তৈরীও করে। সুতরাং যাদের এই হরমোন বেশি হয় তাদের ব্যাথাও বেশি হয়। এছাড়া বিভিন্ন রোগ যেমন- 

এন্ডোমেট্রিওসিসঃ জরায়ুর ভিতরের টিস্যুগুলি জরায়ুর বাইরে কোথাও থাকলে।

জরায়ু ফাইব্রয়েডসঃ জরায়ুর ওয়ালে এক ধরনের নন-ক্যানসার টিউমার হলে।

অ্যাডেনোমায়োসিসঃ আপনার জরায়ুর ভেতরের টিস্যু জরায়ুর দেয়ালে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

তলপেট বা পেলভিক এরিয়ায় প্রদাহজনিত রোগঃ স্ত্রী প্রজনন অঙ্গগুলির এই সংক্রমণ সাধারণত ব্যাকটেরিয়া জনিত যৌন সংক্রমণ দ্বারা ঘটে।

জরায়ু স্টেনোসিসঃ জরায়ুমুখ খুবই ছোট হলে।

ঝুঁকি কাদের বেশি?

  • আপনার বয়স ৩০ বছরের চেয়ে কম
  • ১১ বা তারও কম বয়সে প্রথম মাসিক হলে
  • পিরিয়ডের সময় প্রচুর রক্তপাত হলে
  • অনিয়মিত পিরিয়ড
  • পারিবারে কারো এই সমস্যা থাকলে
  • ধুমপান করলে

লক্ষণসমূহঃ

  • আপনার তলপেটে কামড় দিয়ে বা ক্র্যাম্পিং ব্যথা যা তীব্র হতে পারে
  • আপনার পিরিয়ডের ১ থেকে ৩ দিন আগে শুরু হওয়া ব্যথা, আপনার পিরিয়ড শুরুর ২৪ ঘন্টা পরে সর্বোচ্চ হয় এবং২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে কমে যায়
  • একটানা হালকা ব্যথা
  • ব্যথা যা আপনার শরীরের পিছনে এবং উরুতে ছড়িয়ে পড়ে

কিছু মহিলার ক্ষেত্রে:

  • বমি বমি ভাব
  • পাতলা পায়খানা
  • মাথা ব্যথা
  • মাথা ঘোরা

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

  • এই ব্যাথা প্রতি মাসে আপনার স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে
  • লক্ষণগুলি ক্রমান্বয়ে খারাপ হয়
  • ২৫ বছর বয়সের পরে তীব্র ব্যাথাসহ মাসিক হলে

চিকিৎসক কি করবেন?

আপনার রোগবর্ণনা ও শারিরিক পরিক্ষা করার পর চিকিৎসক কিছু টেস্ট দিতে পারেন। যেমন- আল্ট্রাসাউন্ড, বিভিন্ন রক্তের টেস্ট, এবং জটিল কারন নির্ণয়ে ল্যাপারোস্কপি নামক প্রক্রিয়াও করা লাগতে পারে। 

কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?

চিকিৎসা কারনের উপর নির্ভর করে।  সাধারণত ব্যথা উপশমকারীরা যেমন আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য ওষুধ এবং এন্ডোমেট্রিওসিস বা ফাইব্রয়েডের মতো কারনে ব্যাথা হয়ে থাকলে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। 

ব্যাথা কমাতে আপনি কি করবেন? 

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ও বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি যে বিষয়গুলি আপনি চেষ্টা করতে পারেন:

  • নিয়মিত ব্যায়াম,  শারীরিক মিলন কিছু মহিলার মাসিক ব্যাথা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
  • উত্তাপ ব্যবহার করুন, হিটিং প্যাড, গরম জলের বোতল আপনার তলপেটে ধরে রাখতে পারেন।
  • খাবারে পরিবর্তন, বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন ই, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি -১ ,ভিটামিন বি -৬  এবং ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার এই ব্যাথা নিরাময়ে সাহায্য করে।
  • মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।