প্রতিটা মানুষ কে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, পরিবর্তনের নানান ধাপের ভেতরে দিয়ে যেতে হয়। নারীর ক্ষেত্রে তেমনি একটি শারীরিক গঠন মূলক প্রক্রিয়া হচ্ছে, রজঃস্রাব বা মাসিক, ইংরেজী তে যাকে বলা হয় “মেনস্ট্রুয়েশন” যা প্রতিটি সুস্থ নারী তার বয়ঃসন্ধি কালের পরিবর্তন হিসেবেই দেখে থাকেন।
মাসিক কিঃ
সহজ ভাষায়, প্রতি মাসের একটা নির্দিস্ট সময়ে জরায়ু থেকে নির্গত রক্ত যোনি পথে বাইরে বেরিয়ে আসাকেই মাসিক বা রজঃস্রাব বলা হয়। যদিও সহজাত ভাবে এই চক্রটি ২৮ দিনের হয়ে থাকে, কিন্তু প্রতি টি নারীর ক্ষেত্রে বা শরীর ভেদে এই মাসিক চক্র কারো কারো ২৮ দিনের আগে অথবা ২৮ দিনের পরেও হতে পারে।
একজন নারী গর্ভধারন করবেন কি না তা নির্ভর করে ডিম্বানু নিষিক্ত হওয়ার উপরে। অন্যভাবে বলা যায়, প্রতি মাসেই একটি নারী দেহের জরায়ু ভ্রুণধারণের( Pregnancy) জন্য প্রস্তুত হয়। এক্ষেত্রে ডিম্বাশয় থেকে আসা ডিম্বাণু টি যদি নিষিক্ত হতে না পারে, তাহলেই উক্ত নারীর দেহের জরায়ু থেকে রক্ত পাত হয়। প্রথম ঋতুস্রাবের ঘটনাটি (মেনার্কি বা আদ্যঋতু) সাধারণত ১১-১৩ বছর বয়সে ঘটে থাকে যা ৩-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড সুস্বাস্থ্যে কীভাবে আঘাত হানতে পারে?
মাসিক চলাকালীন যদি অতিরিক্ত রক্তপাত হয়,তবে তা নারীদেহে রক্তশুন্যতার তৈরী করতে পারে। সাধারণত দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের তারতম্য বা উঠানামা এর কারন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সময়মতো নির্ণয় না হলে, এই রক্ত শুন্যতা পুরো প্রজনকালীন সময়েই থেকে যেতে পারে যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়।
পাশাপাশি এছাড়া কারো যদি এজমা (শ্বাসকষ্টজনিত রোগ) বা পেটের পীড়া (ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম) থেকে থাকে, তা এই সময়ে বৃদ্ধি পেয়ে থাকতে পারে।
প্রায়ই নারীরা মাসিক পূর্ববর্তী হতাশায় ভোগেন যা পরবর্তীতে স্থায়ী বিষন্নতায় রূপ নিতে পারে। অন্যদিকে, অনিয়মিত রক্তপাত তা অনেক সময়েই বহুমূত্র রোগ, গর্ভধারনে সমস্যা, স্থুলতা কিংবা ওজন হ্রাস, ডিম্বাশয়ে সিস্ট এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
মাসিকজনিত সমস্যা থাকলে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত?
নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো পরিলক্ষিত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরী –
১. একজন নারী যদি গর্ভবতী, দুগ্ধদানকারী মা না হোন কিংবা মেনোপজের কাছাকাছি বয়সে না থাকার পরেও যদি পরপর ৩ মাস মাসিক না দেখে থাকেন।
২. অনিয়মিত মাসিক থাকলে (রক্তপাত ৮ দিনের বেশী স্থায়ী হলে, দুটি মাসিক চক্রের মধ্যের ব্যবধান ২৪ দিনের কম কিংবা ৩৮ দিনের দিনের বেশী থাকা)।
৩. মাসিককালীন অতিরিক্ত রক্তপাত (যদি প্রতি ২ ঘন্টায় মাসিক সময়ে ব্যবহৃত প্যাড বদল করতে হয়)।
৪. মাসিককালীন চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা, শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া কিংবা বুকে ব্যথা অনুভব করা।
৫. ট্যাম্পোন ব্যবহারের পর হটাৎ জ্বর আসা
৬. মাসিক চলাকালীন অতিরিক্ত পেট ব্যথা (ঔষধ ব্যবহার করার পরেও না কমা)
৭. মাসিক যদি দৈনন্দিন কাজে ব্যঘাত ঘটায় (স্কুল-কলেজ, কর্মস্থল থেকে বিরতি নেওয়া)
৮. সঙ্গম পরবর্তি একাধিকবার রক্তপাত।
৯. মাসিক চলাকালীন মাথা ব্যাথা (মাইগ্রেন হওয়া যা দৈনন্দিন কাজে ব্যঘাত ঘটায়)।
এই বিষয়ে আরোও পড়ুন –
মাসিকে পেটব্যাথা বা মেন্সট্রুয়াল ক্রাম্প, কারন ও চিকিৎসা |
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।