From a Doctor

মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তি, নির্দিষ্ট বয়সে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া

মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তি, নির্দিষ্ট বয়সে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া

মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তি কি?

মেয়েদের শরীরে প্রজনন(reproductive) হরমোনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে তাদের মাসিক চক্র কে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়। এই হরমোনের উপস্থিতির ফলে একজন নারী যেমন বয়সন্ধিকালে মাসিক বা রজস্রাবের উপস্থিতি অনুভব করেন, তেমনি প্রজনন চক্রের শেষে সেই নারীই আবার মাসিকচক্র এর অনুপস্থিতি টের পান তার শর্রীরে যাকে মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তি বলে।

 

মেনোপজ কি স্বাভাবিক পরিবর্তন?

পূর্বেই উল্লেখিত, উক্ত প্রক্রিয়াটি হরমোনের তারতম্যের (হরমোনের কম-বেশী হওয়া) উপর নির্ভর করে। অনেকেই মেনোপজ কে শারীরিক অসুস্থতা বলে মনে করেন যা সঠিক নয়। উক্ত প্রক্রিয়াটিও সম্পূূর্ণ রূপে স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন। নারীদেহে প্রধানত ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের অনুপস্থিতিই এর জন্য দায়ী। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন ডিম্বাশয় কে অপারেশনের মাধ্যমে কেটে বাদ দেওয়া, ডিম্বাশয়ের অপ্রতুলতা থাকা অথবা ক্যান্সার জনিত চিকিৎসা (কেমোথেরাপী বা রেডিয়োথেরাপী) নেওয়া হলে একজন নারী স্বাভাবিক বয়সের আগেই মাসিকের অনুপস্থিতি দেখে থাকেন।

 

মেনোপজের বয়সকাল কতো?

সাধারণত, ৪৫-৫৫ বছর সময়কাল ই মেনোপজের সময়কাল বলে ধরে নেয়া হয়, এবং শরীরভেদে নারীরা উক্ত সময়কালের যেকোনো বয়সেই এই পরিবর্তন এর সম্মুখীন হয়ে থাকে। তবে ডিম্বাশয়ের অপ্রতুলতা থাকলে প্রতি ১০০ জনে ১ জন নারীর ৪০ বছরের আগেই মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

 

উপসর্গ কি কি?

মেনোপজ চলাকালীন প্রায় সকল নারীই তাদের শরীরে কিছু উপসর্গ টের পান যাদের মধ্যে হট ফ্লাস কিংবা হঠাৎ করে শরীরে অসহ্য গরম অনুভূতি হওয়া, হঠাৎ শরীরে প্রচুর ঘাম দেয়া (বিশেষত রাত্রিকালীন সময়ে), ঘুমের সমস্যা হওয়া ইত্যাদি। অনেকেই এ সময় বিষন্নতা জনিত কারনে মানসিক উদ্বেগ, শারীরিক মিলনে অনিহা, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া অথবা মনোযোগের বিঘ্ন ঘটা ইত্যাদি তে ভোগেন। উক্ত উপসর্গ গুলো মেনোপজ হওয়ার মাস বা বছর খানেক আগেও দেখা দিতে পারে।

 

চিকিৎসা বা কখন ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত?

যখন মেনোপজ স্বাভাবিক দৈনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায় তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই, শারীরিক এবং মানসিক উপসর্গ যদি ভয়াবহ রূপ নেয় তাহলে যথোপযুক্ত চিকিৎসা যেমন হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপী (কৃত্তিম উপায়ে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন দেওয়া) এবং মানসিক সুস্থতার জন্য পরামর্শ গ্রহনের প্রয়োজন পড়তে পারে। এক্ষেত্রে, নানা উপসর্গের সম্পর্কে সচেতনতা এবং কুসংষ্কার  থেকে বিরত থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো বাঁধা সৃষ্টি হবেনা। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে মেনোপজ সম্পূর্ণ রুপে স্বাভাবিক বার্ধক্যকালীন প্রক্রিয়া। তাই এসময় মনের যত্নের সাথে সাথে সুষম খাদ্যাভাস, দৈনিক ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

 

লিখেছেন,

ডাঃ তপাগ্নী চক্রবর্তী
এমবিবিএস, এম পি এইচ (জনস্বাস্থ্য বিষয়ে অধ্যয়নরত)
স্কুল অব পাবলিক হেলথ,
ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা, কানাডা