র্যাবিস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে র্যাবিস বা জলাতঙ্ক নামক ভয়ংকর রোগ হয়। এটি খুবই বিরল একটি রোগ কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষন প্রকাশিত হলে মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ।
কিভাবে ছড়ায়ঃ
জলাতঙ্ক আক্রান্ত বিভিন্ন প্রাণী মানুষকে কামড়ালে বা খামচি মাধ্যমে চামড়া তুলে ফেললে মানুষের জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। বাংলাদেশে এটি মূলত কুকুর দিয়ে ছড়ায়। এছাড়াও অন্যান্য প্রাণী যেমন; বিড়াল, বাদুড়, কাঠবিড়ালি, শিয়াল ইত্যাদি দ্বারা ছড়াতে পারে। কামড় বা খামছি ছাড়াও আপনার চামড়ায় কোন ক্ষত থাকলে এবং সেই জায়গায় কোন আক্রান্ত প্রাণী জিভ দিয়ে চাটলে এটা হতে পারে।
চামড়া না কাটলে বা ক্ষত না হলে র্যাবিস হবে না।
এসব পশু কামড়ালে কি করবেন?
আপনার পোষা প্রাণী ছাড়া, যেসব প্রাণী রেবিস ছড়াতে পারে তাদের থেকে দূরে থাকুন। তারপরও কোন প্রাণী বিশেষ করে কুকুর কামড়ালে বা আচড় দিলে এই কাজগুলো করতে হবে-
- সাবান ও চলমান পানি ( যেমন টিউবওয়েলে চাপ দিয়ে দিয়ে বা চলমান টেপের নিচে বা কোন পাত্রে পানি নিয়ে অন্যকেউ ক্ষত স্থানে ধারাবাহিকবভাবে ঢেলে) দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করুন ।সাবান ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণে হয়তো আপনি ভয়ঙ্কর একটি ইনফেকশন থেকে বেঁচে যেতে পারেন।
- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, নিকটস্থ হাসপাতালে যান। কোনভাবেই এটা নিয়ে অবহেলা বা দেরি করা যাবে না।
হাসপাতালে কি করা হতে পারে?
হাসপাতালে আপনার ক্ষতের ধরন দেখে চিকিৎসক আবারো সেটা পরিষ্কার করতে পারেন। এরপর আপনাকে রেবিস ভ্যাকসিন এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন নামক ইনজেকশন দেয়া হতে পারে।
জলাতঙ্কের লক্ষণ
রেবিস আক্রান্ত প্রাণী, কামড়ানোর সাথে সাথে আপনার শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা যাবে না। লক্ষণ প্রকাশিত হতে তিন থেকে ১২ সপ্তাহের মত সময় লাগতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো-
- অত্যধিক জ্বর
- মাথা ব্যাথা
- খুব বেশি উদ্বেগ বা ভয় লাগা
- যে জায়গায় কামড় দিয়েছে সে জায়গা অবস লাগা বা চুলকানো
কিছুদিনের মধ্যেই আরো মারাত্মক লক্ষণ প্রকাশিত হয়। যেমন-
- মুখে প্রচুর পরিমাণে লালা আসা
- কোন কিছু গিলতে সমস্যা
- বিভ্রান্তি
- আক্রমণাত্মক ব্যবহার
- দৃষ্টি ও শ্রবণ ভ্রম সৃষ্টি হওয়া
- শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া
- পেশিতে ব্যথা হওয়া
- পুরো শরীর অবশ হয়ে যাওয়া
এই লক্ষণগুলো প্রকাশিত হলে জলাতঙ্ক আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব।
সতর্কতাঃ
যেসব পশু কামড়ালে জলাতঙ্ক হয়, আপনার যদি পেশাগত কারণে বা অন্য কারণে সেসব পশুর সংস্পর্শে যেতে হয় তাহলে আগে থেকেই ভ্যাকসিন নিয়ে রাখা ভালো।
- এসব পশু কামড়ালে দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে।
- অপরিচিত জায়গায়, অপরিচিত পশুর থেকে দূরে থাকতে হবে।
- রাস্তাঘাটে কুকুরের ব্যাপারে সাবধান হতে হবে
- আপনার পালিত কুকুর বিড়াল ইত্যাদি প্রাণীকে নিয়মিত টিকা দিতে হবে।
লিখেছেন,
ডা কামরুল ইসলাম শিপু
সিনিয়র লেকচারার, মাইক্রোবায়োলজি, নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ
এম এস সি ক্যান্ডিডেট, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজ
দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা, ইউ কে।
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়।