From a Doctor

স্ক্যাবিস; চুলকানি থেকে বাঁচতে কি করবেন

স্ক্যাবিস; চুলকানি থেকে বাঁচতে কি করবেন

চুলকানোর যতগুলো কারণ আছে,  তারমধ্যে সবচেয়ে পীড়াদায়ক সম্ভবত স্ক্যাবিস।  বাংলাদেশে এই রোগ খুবই কমন এবং অনেক মানুষ স্ক্যাবিস আক্রান্ত হয়। 

খুবই ক্ষুদ্র একটি পোকা এই চূড়ান্ত চুলকানির কারণ।  এ পোকা মানুষের চামড়া ভেতরে ঢুকে যায় এবং সেখানে বংশবৃদ্ধি করে। প্রচন্ড চুলকানির কারণে মানুষের হাতে  এবং নখে লেগে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।  এটি খুবই ক্ষুদ্র পোকা এবং খালি চোখে দেখা যায় না।  

লক্ষণসমূহঃ

  • প্রচন্ড চুলকানি বিশেষ করে রাতে। চুলকানি সাধারণত প্রথমে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে তারপর সেখান থেকে  ঘাড়ে,  নাভির আশে পাশে চামড়ায়,   লজ্জাস্থানের আশেপাশে, এবং পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।এই পোকা মাত্র কয়েকটি শরীরে আসলেই প্রায় পুরো শরীরের চুলকানি শুরু হয় কারণ এটি শরীরে এলার্জির মত সমস্যার সৃষ্টি করে।
  •  চুলকানোর জায়গা একটু লাল হয়ে ফুলে যাওয়া ।
  •  অতিরিক্ত চুলকানির কারণে চামড়া ফেটে যাওয়া। 
  •  আগে থেকে আপনার কোন চামড়ার অসুখ থাকলে সেটা আরও খারাপ হওয়া।

কিভাবে ছড়ায়ঃ

 একজনের কাছ থেকে আরেকজনে  স্ক্যাবিস ছড়ানোর জন্য চামড়ার সাথে চামড়া লাগা প্রয়োজন।  এজন্য স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির  হাত লম্বা সময় ধরে থাকলে,  তার সাথে সেক্স করলে স্ক্যাবিস ছড়াতে পারে।  সাধারণত একটু হাত ধরে স্ক্যাবিস চালাবে না।  কারণ এইগুলো একজনের সাথে আরেকজনের সাথে যেতে 15 থেকে 20 মিনিট সময় লাগে।

এসব জায়গায় একসাথে অনেক লোক থাকেন যেমন বস্তিতে, রিফিউজি ক্যাম্পে সেখানে স্ক্যাবিসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। এছাড়াও একই বেড একের অধিক মানুষ ব্যবহার করার কারণে একজনের  কাছ থেকে আরেকজনের কাছে স্কেবিস ছড়িয়ে পড়ে।  অনেক সময় স্কুলে স্ক্যাবিস নিয়ে কোন বাচ্চা আসলে তার কাছ থেকে অন্যান্য বাচ্চার কাছে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেনঃ

  • আপনি যদি মনে করেন আপনার স্ক্যাবিস হয়েছে
  •  আপনার পরিবারের কারো স্ক্যাবিস হলে বা কারো স্ক্যাবিস এর মত লক্ষণ থাকলে। কারণ পরিবারের একজনের স্ক্যাবিস হলে সেটা বাকি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

 চিকিৎসক কি করবেনঃ

 চিকিৎসক সাধারণত আপনার চামড়ায় স্ক্যাবিস এর ফোড়া এবং চুলকানির  কারণে  চামড়ার ক্ষত দেখেই স্ক্যাবিস কি না বলে দিতে পারেন।

স্ক্যাবিস হলে আপনাকে যে ঔষধ দেয়া হবে সেটা খুব ভালোভাবে নিয়ম মেনে ব্যবহার না করলে স্ক্যাবিস কমানো খুবই কষ্টকর।

 স্ক্যাবিসের ঔষধ কিভাবে দিতে হয় তার নিয়মাবলী –

  •  স্কিন ক্রিম বা মলম দেয়া হবে সেটার  বক্সের ভিতরে একটি লিফলেট পাবেন। এটি ভালো করে পড়ুন।
  • ক্রিম বা মলম আপনার মুখমন্ডল বাদে গলা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত সকল জায়গায় দিতে হবে।  যেসব জায়গায় চুলকানি বেশি হয় সেখানে ভালো করে লাগাবেন। কিন্তু একই সাথে যেসব জায়গায় কোন চুলকানি নেই সেখানেও ঔষধ লাগাতে হবে।
  •  একসাথে কয়েকটি ক্রিম বা মলম কিনে আনুন কারণ একবার পুরো শরীরে লাগাতে পুরোটা শেষ হয়ে যায়।
  •  ঔষধ দেয়ার পর সাধারণত 8 থেকে 12 ঘন্টা সেটা আপনার শরীরে থাকতে হবে। এসময় গোসল করা  বা হাতমুখ ধোঁয়া  থেকে বিরত থাকবেন। যদি হাত মুখ ধুয়ে থাকেন সে জায়গায় আবার ঔষধ লাগাতে হবে।
  •  যেসব মেয়েরা বুকের দুধ খাওয়াবেন তারা বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে স্তনবৃন্ত থেকে ঔষধ মুছে ফেলবেন এবং বাচ্চা খাওয়ার পরে পুনরায় ঔষধ সেখানে লাগাতে হবে।
  •  বাচ্চাদের  স্ক্যাবিস হলে তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখবে।
  •  ঘরের কারো স্ক্যাবিস হলে তার কাপড় চোপড়, বেডশীট ইত্যাদি গরম পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  •  অনেকের স্ক্যাবিস এর ঔষধে কাজ নাও করতে পারে সে ক্ষেত্রে এক সপ্তাহের বেশি চুলকানি থাকলে পুনরায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক ঔষধ বদলে নতুন ওষুধ দিতে পারেন। 

সতর্কতাঃ

 স্ক্যাবিস হলে খুব বেশি চুলকানি হয়। কিন্তু অতিরিক্ত চুলকাতে গিয়ে অনেকে চামড়া বিভিন্ন জায়গায় তুলে ফেলেন। যার কারণে সেসব জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ইনফেকশন করার সুযোগ পায়। এ ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকতে হবে