আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য সঠিক রক্তপ্রবাহ প্রয়োজন। কোন কারনে, মস্তিষ্কের কোন অংশ রক্তপ্রবাহের ব্যাঘাত ঘটলে সেটা কি আমরা স্ট্রোক বলি।
এটি খুবই গুরুতর একটি সমস্যা। কারো স্ট্রোক হয়েছে মনে হলে, দেরি না করে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
লক্ষণসমূহঃ
- মুখের দিকে বেঁকে যাওয়া
- হাত বা পা অথবা উভয়েই দুর্বল হয়ে যাওয়া
- কথা জড়িয়ে যাওয়া তোমার কথা বলতে না পারা
- অন্য কারো কথা বুঝতে সমস্যা হওয়া
- হঠাৎ করে পড়ে যাওয়া
এগুলো মোটামুটি একটি স্ট্রোক এর প্রধান লক্ষণ। অন্য বিভিন্ন কারণে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে, কিন্তু কোন ব্যক্তি এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে আমাদের প্রথমে স্ট্রোকের কথা চিন্তা করা উচিত।
কেন হয়?
শরীরের সব অঙ্গ প্রতঙ্গের মত, মস্তিষ্কের ক্রমাগত নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত প্রবাহ প্রয়োজন হয়। এই রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কে গুরু অক্সিজেন যেতে পারে না। সাধারণত স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের কোন নির্দিষ্ট জায়গায় রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটি দুটি প্রধান কারণে হতে পারেই
- ইশকেমিক স্ট্রোকঃ রক্তনালিতে কোনো বাধার কারণে যেমন রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাধলে
- হেমোরেজিক স্ট্রোকঃ মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গেলে
কাদের হয়?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। সুতরাং বয়স্ক যে কারো শুরু হতে পারে। ইদানিং অনেক কম বয়সেও অনেক মানুষের স্ট্রোক হতে দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যেমন-
- আপনার পরিবারের কারো স্ট্রোক হলে
- আপনার আগে কখনো হার্ট অ্যাটাক বা মিনি স্ট্রোক হলে
- আপনার ওজন অনেক বেশি হলে
- ধূমপান করলে
- শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক বেশি থাকলে
- আপনার উচ্চরক্তচাপ থাকলে
- ডায়াবেটিস থাকলে
- অতিরিক্ত মদ্যপান করলে
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করবেন। অতিরিক্ত লবন খাওয়া বন্ধ করতে হবে। ফাস্টফুড খাওয়া যথাসম্ভব পরিহার করা উচিত।
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করা উচিত। এটা আপনি দ্রুত হেঁটে, বাইসাইকেল চালিয়ে বা সাঁতার কেটে করতে পারেন।
- ধূমপান সম্পূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে। ধূমপান একটি মূল কারণ।
- মদ্যপান পরিহার করা উচিত।
- আপনার যদি কোন হূদরোগ, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস থাকে সেগুলোর জন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
যা করবেন নাঃ
- কোনো ধরনের ওষুধ নিজ থেকে দিবেন না।
- মুখে কিছু খাওয়াতে যাবেন না। পানিও না।পানি শ্বাসনালিতে গিয়ে ফুসফুসে ইনফেকশন করতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
স্ট্রোকের যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই, এক মুহূর্ত দেরি না করেই হাসপাতালে যাবেন।
কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?
- চিকিৎসার প্রথম পর্যায়ে এটি স্ট্রোক কি না, সেটি খুঁজে দেখা হয়। এজন্য চিকিৎসক রূপ বর্ণনা শুনে এবং বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করে প্রাথমিক সিদ্ধান্তে আসার পর কয়েকটি টেস্ট করাতে দিতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা দরকার হয়।
- আপনার স্ট্রোক হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে এবং সেখানে আপনাকে নিয়মিত ঔষধ এবং পর্যবেক্ষণ করা হবে। একই সাথে আরো বিভিন্ন টেস্ট করে স্ট্রোকের কারণ খোজা হবে। কোন কারণ খুঁজে পেলে স্ট্রোকের চিকিৎসা সাথে সাথে সেই কারণের ও চিকিৎসা করা হবে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ট্রোকের চিকিৎসা লম্বা সময় ধরে করতে হয়। এজন্য রোগী এবং পরিবারের মানুষের মনোবল না হারানো খুবই জরুরী। এই সমস্যা শুধু ওষুধের মাধ্যমে ভালো হবে না। একই সাথে পরিবারের মানসিক সহায়তা এ রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
- আপনাকে এমন কিছু ঔষধ দেয়া হতে পারে যা লম্বা সময় ধরে খাওয়া লাগবে। এসব ওষুধ খুবই সাবধানতার সাথে, পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় সময়মতো এবং নিয়মিত খাওয়া অত্যন্ত জরুরী।
- আপনার যদি মস্তিষ্কে রক্তপাতজনিত স্ট্রোক হয় ( হেমোরেজিক স্ট্রোক), তাহলে কোন কোন ক্ষেত্রে অপারেশন করা লাগতে পারে।
এছাড়া সকল রোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাহায্যকারী চিকিৎসা করা হয়। যেমন
- রোগীকে খাবার খেতে সহায়তা করার জন্য, নাক দিয়ে একটি নল পেটে ঢুকানো হয়।
- রক্তনালী দিয়ে স্যালাইন দেয়া হয়।
- নাক দিয়ে অনেক সময় অক্সিজেন দেওয়া হয়।
সতর্কতাঃ
স্ট্রোক খুবই মারাত্মক একটি সমস্যা। অনেক মানুষ কথা জড়িয়ে যাওয়া, হঠাৎ পড়ে যাওয়া, হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদিকে শারীরিক দুর্বলতা মনে করে থাকেন। এজন্য রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে অনেক দেরি হয়। যার কারণে চিকিৎসায় খুব সুফল পাওয়া যায় না। এজন্য স্ট্রোকের একটি লক্ষণ থাকলেও নিরাপদ থাকার জন্য একজন চিকিৎসকের কাছে যান।
Pingback: উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন - From a Doctor
Pingback: উচ্চ কোলেস্টেরলের কারন ও জটিলতা - From a Doctor