From a Doctor

হিটস্ট্রোক; অতিরিক্ত গরমে জীবনের ঝুঁকি

হিটস্ট্রোক; অতিরিক্ত গরমে জীবনের ঝুঁকি

আমাদের দেশে গরমের সময়ে তাপমাত্রা খুবই বেশি থাকে। ইদানিং দেখা যাচ্ছে,  তাপমাত্রা মাঝে মাঝে  ৪০  ডিগ্রী অতিক্রম করে যায়।  এমন অবস্থায় অতিরিক্ত গরমের কারণে এবং সরাসরি সূর্যের নিচে থাকার কারণে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সমস্যা হতে পারে তার নাম হিটস্ট্রোক। প্রচণ্ড গরমে শরীরে পানির  মাত্রা কমে গিয়ে এবং ব্রেনের তাপ নিয়ন্ত্রণ অংশ অকেজো হয়ে গিয়ে পুরো শরীর হঠাৎ করে কলাপ্স করতে পারে।

কাদের হয়?

  • এটি সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ বয়স্কদের বেশি হয়।  তবে সরাসরি সূর্যের নিচে অতিরিক্ত তাপে যেকোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।
  •  যারা বিভিন্ন ঔষধ যেমন উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ, মানসিক রোগের ঔষধ ,  বিভিন্ন রোগের ঔষধ,  খিচুনির ঔষধ,  এবং মূত্রবর্ধক ঔষধ খান  তাদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লক্ষণসমূহঃ

  • মাথা ঘোরা এবং হালকা মাথাব্যথা
  • গরম থাকা সত্ত্বেও ঘামের অভাব
  • চামড়া গরম হয়ে যাওয়া, লাল হওয়া এবং খুব শুকনো লাগা
  • পেশী দুর্বলতা 
  • বমি বমি ভাব এবং বমি
  • দ্রুত হৃদস্পন্দন, যা শক্তিশালী বা দুর্বল হতে পারে
  • দ্রুত, অগভীর শ্বাস
  • আচরণগত পরিবর্তন যেমন বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা 
  • খিঁচুনি
  • অচেতনতা

কারো হিটস্ট্রোক হলে কি করবেন?

হিট স্ট্রোক এর ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা খুবই জরুরী।  এজন্য সবাই এ বিষয়ে জানা দরকার। কেউ অতিরিক্ত গরমে হঠাৎ করে  পড়ে গেলে,  প্রথমেই একটি গাড়ি কল করুন।   অসুস্থ ব্যক্তি কে দ্রুত কোন স্থানে নিয়ে যান।  অসুস্থ ব্যক্তির শরীর ঠান্ডা করতে নিচের পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করুন-

  • কাপড় পানিতে ভিজিয়ে সেটা দিয়ে গা মুছে দিন
  •  ফ্যান  ছাড়ুন বাঁ হাত পাখা দিয়ে বাতাস করুন
  •  ফ্রিজে ঠাণ্ডা পানি থাকলে সেগুলো রোগীর ঘাড়, বগল ইত্যাদি স্থানে দিন
  •  খুব ঠান্ডা পানিতে রোগীকে গলা পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখুন।  সম্ভব না হলে টিউবলের পানি দিতে পারেন।
  • বয়স্ক এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শরীর ঠান্ডা করার জন্য বরফ ব্যবহার করবেন না।

দ্রুত  হাসপাতালে নিয়ে যান। যেকোনো ইমারজেন্সি অবস্থায়,  কোন প্রাইভেট চেম্বারে না গিয়ে সরাসরি হাসপাতালে যাওয়া উচিত।

কিভাবে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করবেন?

 যখন বাইরে অতিরিক্ত গরম এবং সূর্য  খুবই প্রখর থাকে তখন খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে যাবেন না। এছাড়া-

  •  গরমে হালকা রঙের,  ঢিলে ঢালা পোশাক পরুন।
  •  ছাতা ব্যবহার করুন।
  •  অনেক বেশি পানি পান করুন।  প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ প্লাস পানি পান করুন।  এছাড়াও লেবু সহ বিভিন্ন ফলের জুস খেতে পারেন।
  • যারা এই গরমেও শারীরিক ব্যায়াম করেন তারা  পানি  ও ইলেক্ট্রোলাইট ব্যাপারে সচেতন থাকবেন।
  • আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পানি আছে কি না বুঝতে প্রস্রাবের রং খেয়াল করুন।  প্রস্রাবের রং খুব ঘন হলে  বুঝবেন শরীরে পানি কমে গেছে।
  • চা-কফি জাতীয় পানীয় পরিহার করুন।

সতর্কতাঃ 

হিটস্ট্রোক খুবই সিরিয়াস একটি সমস্যা।  আপনি যদি মনে করেন কারো হিট স্ট্রোক হয়েছে,  সাথে সাথে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করুন। অতিরিক্ত গরম থেকে নিজেকেও পরিবারের সবাইকে বাঁচাতে এই বিষয়ে জানুন এবং সচেতন করুন।   হিট স্ট্রোকের চিকিৎসা করা থেকে এটি প্রতিরোধ করা সহজ।