From a Doctor

হেপাটাইটিস; যা জানা জরুরি

হেপাটাইটিস; যা জানা জরুরি

 হেপাটাইটিস  হল যকৃতের এক ধরনের প্রদাহ।  বেশিরভাগ সময় এটি এক ধরনের ভাইরাস  দিয়ে হয়ে থাকে। আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন জন্ডিস মানেই হেপাটাইটিস। আসলে জন্ডিস হলো যকৃতের বিভিন্ন রোগের একটি লক্ষণ মাত্র। 

বিভিন্ন ধরনের হেপাটাইটিস হতে পারে।  আমাদের দেশে হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস ই বেশি হয়ে থাকে। ভাইরাসজনিত হেপাটাইটিস  ছাড়াও,  মদপানে অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস নামে এক ধরনের হেপাটাইটিস হতে পারে।

লক্ষণ

  • মাংস ও জয়েন্টে ব্যথা
  •  খুব বেশি জ্বর
  •  বমি বমি ভাব
  •  বমি করা
  •   সব সময় খুবই ক্লান্ত বোধ করা
  • পেটে ব্যাথা
  •  খাবার রুচি চলে যাওয়া
  •  চামড়ায় চুলকানি
  •  চোখের এবং চামড়ার রঙ হলুদ হয়ে যাওয়া
  •  প্রস্রাব ও পায়খানার রঙ বদলে যাওয়া

হেপাটাইটিস এঃ

এ ধরনের  হেপাটাইটিস সাধারণত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। যেসব এলাকায় স্বাস্থ্যকর টয়লেটের ব্যবস্থা নেই, বা মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করে সেসব জায়গায় হেপাটাইটিস এ প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

এ রোগ সাধারণত কয়েক মাসেই নিজ থেকে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে এটি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে।  হেপাটাইটিস এ হলে আলাদাভাবে কোন চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আপনার শারীরিক অসুস্থ থাকলে চিকিৎসক সে অনুসারে আপনাকে ওষুধ লিখে দিতে পারেন।

আপনি যদি মনে করেন আপনার কোন কারনে হেপাটাইটিস হয়েছে,  তাহলে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ হাসপাতালে বা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিন। কোনভাবেই কবিরাজ হোমিওপ্যাথি,বা ভেষজ চিকিৎসা দিয়ে হেপাটাইটিস এর চিকিৎসা করাতে যাবেন না। 

হেপাটাইটিস বিঃ

এটি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস দিয়ে হয়।  এই ভাইরাস  রক্তের মাধ্যমে, মা থেকে বাচ্চার কাছে, অনিরাপদ যৌন ক্রিয়ার মাধ্যমে,  মাদক নেয়ার ইনজেকশনের নিডলের মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনের কাছে  ছড়াতে পারে। যেহেতু এই ভাইরাস ইনজেকশনের নিডলের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে যেহেতু যারা হাসপাতালে কাজ করেন অনেক সময় দুর্ঘটনাক্রমে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। এছাড়া যেসব পুরুষ পুরুষের সাথে যৌনক্রিয়া করে থাকেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। 

হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাকসিন  বাংলাদেশে আছে।  কিন্তু সতর্কতা খুব জরুরী।

হেপাটাইটিস ইঃ

হেপাটাইটিস ই ভাইরাস  এই রোগ করে। সাধারণত যেসব মানুষ কম রান্না করা মাংস খান, এবং সেই মাংসে এই ভাইরাস থেকে থাকলে মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়াও এই ভাইরাসে  হেপাটাইটিস এ ভাইরাস এর  মতই নোংরা পানি ও অপরিচ্ছন্ন খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 এই ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন নেই।

অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস

দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপানের কারণে যকৃতে প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের প্রদাহকে অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস বলে। এ ধরনের হেপাটাইটিস সাধারণত কোনো লক্ষণ ও সৃষ্টি করে না। যার কারণে অনেকেই বুঝতে পারেন না,  তাদের যকৃত খুব খারাপভাবে আক্রান্ত হয়েছে। 

বেশিরভাগ হেপাটাইটিস সময়মতো চিকিৎসা না করালে আরো খারাপ লাগে পরিণত হতে পারে।

সতর্কতাঃ

হেপাটাইটিস  রোগীদের মধ্যে লিভার সিরোসিস এবং যকৃতের বিভিন্ন ক্যান্সার হতে পারে।  এজন্য হেপাটাইটিস টিকা নিন।  যেসব কারণে হেপাটাইটিস হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকুন।  হেপাটাইটিসের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে কবিরাজ হোমিওপ্যাথি ভেষজ এসব চিকিৎসা না করিয়ে সরাসরি একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে যান। কোনভাবেই এই রোগ নিয়ে অবহেলা করা যাবে না।

 

লিখেছেন,
এম বি বি এস
এম এস সি ক্যন্ডিডেট, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজ
দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা,ইউ কে
আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত ও সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক বলতে নুন্যতম এম বি বি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়