From a Doctor

শিশুর বিকাশ: জন্ম থেকে ৩ মাস বয়স পর্যন্ত

শিশুর বিকাশ: জন্ম থেকে ৩ মাস বয়স পর্যন্ত

শিশুর বিকাশ জন্মের সাথে সাথে শুরু হয়। জন্ম থেকে ৩ মাস পর্যন্ত শিশুর বিকাশের প্রধান মাইলফলকগুলি জানুন— এবং কিছু ঠিক না হলে কী করতে হবে তা জানুন।

আপনার শিশুর প্রথম তিন মাসে অনেক কিছু ঘটে। বেশিরভাগ শিশু একই বয়সে নির্দিষ্ট মাইলফলকগুলিতে পৌঁছায়।  কিন্তু অনেক শিশু নিজ গতিতে বেড়ে ওঠে। 

 

কি আশা করবেন?

প্রথমে, আপনার শিশুর যত্ন, খাওয়ানো, ডায়াপার বদলানো একটি অন্তহীন চক্রের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু শীঘ্রই, আপনার শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের লক্ষণ দেখা দেবে।

  • নড়াচড়ার দক্ষতাঃ আপনার নবজাতকের মাথা প্রথমে নড়বড়ে হবে এবং নড়াচড়া করলেই মাথা ঠিক রাখতে পারবে না। কিন্তু শীঘ্রই শিশু তার পেটের উপর শুয়ে থাকা অবস্থায় তার মাথা এবং বুক তুলতে সক্ষম হবে, সেই সাথে সেই অবস্থানে তার পা প্রসারিত করতে এবং লাথি মারতে সক্ষম হবে। যদি খেলনা দেখান, তাহলে তা আঁকড়ে ধরবে এবং কয়েক মুহুর্তের জন্য শক্ত করে ধরে থাকবে।
  • শ্রবণঃ আপনার শিশু শব্দের মাত্রার প্রতি সংবেদনশীল হবে। আপনার কণ্ঠস্বরের সাড়া দিতে শুরু করবে এবং আপনার দিকে ফিরে হাসবে। 
  • দৃষ্টিঃ খাওয়ানোর সময় আপনার শিশু সম্ভবত আপনার মুখের দিকে, বিশেষ করে আপনার চোখের দিকে ফোকাস করবে। ১ মাস বয়সে, আপনার শিশু তীক্ষ্ণভাবে বিপরীত রং বা কালো-সাদা বোল্ড প্যাটার্ন দেখতে পছন্দ করবে। প্রায় ২ মাস বয়সে, আপনার শিশুর চোখ আরও সমন্বিত হয়ে উঠবে,এবং কোন কিছু তার সামনে নিয়ে এদিক ওদিক করলে চোখ দিয়ে তা ট্রাক করবে। শীঘ্রই সে পরিচিত বস্তু এবং দূরের মানুষ চিনতে শুরু করবে।
  • যোগাযোগঃ ২ মাস বয়সের মধ্যে, আপনি যখন কথা বলবেন বা আলতোভাবে একসাথে খেলবেন তখন আপনার শিশু স্বরধ্বনির পুনরাবৃত্তি করতে পারে।

আপনার শিশুর বিকাশে আপনি সাহায্য করবেন কিভাবে?

আপনার সন্তানের সাথে আপনার সম্পর্ক তার সুস্থ বিকাশের ভিত্তি। আপনি যা করতে পারেন:

  • আপনার বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে রাখুনঃ এটি আপনার নবজাতককে নিরাপদ, ভালোবাসা বোধ করতে সাহায্য করতে পারে।  শিশুকে আপনার কনিষ্ঠ আঙুল ধরতে দিন এবং আপনার মুখ স্পর্শ করতে দিন।
  • স্বাধীনভাবে কথা বলুনঃ সহজ কথোপকথন ভাষা বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে। উচ্চস্বরে একটি গল্প পড়ুন। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন এবং আপনার শিশুর উত্তেজনার উত্তর আপনি বাড়ির চারপাশে যা দেখেন, শুনেন এবং গন্ধ পান তা দিয়ে বর্ণনা করুন। মনে রাখবেন যে আপনার কণ্ঠস্বর তার আবেগের সাথে যোগাযোগ করে।
  • অবস্থান পরিবর্তন করুনঃ আপনার শিশুকে বাইরের দিকে মুখ করে ধরুন। নিবিড় তত্ত্বাবধানে, আপনার শিশুকে, খেলার জন্য তার পেটের উপর শুয়িয়ে রাখুন। তার সামনে রঙিন খেলনা ধরুন বা শিশুকে তার মাথা তুলতে উত্সাহিত করার জন্য একটি আকর্ষণীয় শব্দ করুন। অনেক নবজাতক তাদের পেটে বিরক্ত বা হতাশ হয়ে পড়ে, তাই এই সেশনগুলি প্রথমে সংক্ষিপ্ত রাখুন — একবারে কয়েক মিনিট। যদি তন্দ্রা শুরু হয়, আপনার শিশুকে তার পিঠের উপর রেখে ঘুমাতে দিন।
  • কান্নার দ্রুত সাড়া দিনঃ বেশিরভাগ নবজাতকের জন্য, জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কান্নার স্পেল সর্বোচ্চ হয় এবং তারপর ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। আপনার শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন, ক্ষিদা লাগলে বা কেবল কোলে যাওয়ার প্রয়োজন হোক না কেন, দ্রুত সাড়া দিন। খুব বেশি মনোযোগ আপনার শিশুকে নষ্ট করবে – এই চিন্তা করবেন না। আপনার যত্ন ও মনোযোগ  শিশুর সাথে আপনার একটি দৃঢ় বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করবে — এবং এই আত্মবিশ্বাস তাকে একদিন আপনার সাহায্য ছাড়াই স্থির হতে সাহায্য করবে।

যখন বিকাশ সমময়মতো হয় না, কি করবেন?

আপনার শিশু সময়সূচীর আগে কিছু উন্নয়নমূলক মাইলফলকে পৌঁছাতে পারে এবং অন্যদের থেকে পিছিয়েও থাকতে পারে। এটি স্বাভাবিত।

 যাইহোক, বিকাশের বিলম্বের সতর্কতা লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরী। আপনি যদি আপনার শিশুর বিকাশের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হন বা ৩ মাস বয়সের মধ্যে আপনি এই ‘’অতি জরুরী’’ লক্ষনের মধ্যে কোনটি লক্ষ্য করেন তবে আপনার শিশুর ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন:

  • মাথা নিয়ন্ত্রণে কোনো উন্নতি দেখায়নি
  • উচ্চ শব্দে সাড়া দেয় বলে মনে হয় না
  • আপনার কণ্ঠের শব্দে হাসে না
  • তার চোখ দিয়ে চলন্ত বস্তু অনুসরণ করে না
  • তার হাত খেয়াল করে না
  • বস্তুকে ধরতে চায় না এবং ধরে রাখে না

মনে রাখবেন যে প্রতিটি শিশু অনন্য – কিন্তু আপনার সহজাত প্রবৃত্তি বা মা হিসেবে আপনার ধারনাও গুরুত্বপূর্ণ। যত তাড়াতাড়ি সমস্যা ধরা পড়বে, তত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করা যাবে।

 

 

আমাদের প্রতিটি লিখা চিকিৎসক দ্বারা লিখিত এবং সম্পাদিত। এই ওয়েবসাইটে চিকিৎসক/ডাক্তার বলতে নুন্যতম এম বি বি এস বা বি ডি এস ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের বোঝানো হয়। এই ওয়েবসাইটের সকল লেখা সচেতনতামূলক এবং চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়