From a Doctor

স্ক্যাবিস চুলকানি থেকে বাঁচতে কি করবেন

স্ক্যাবিস; চুলকানি থেকে বাঁচতে কি করবেন

চুলকানোর যতগুলো কারণ আছে,  তারমধ্যে সবচেয়ে পীড়াদায়ক সম্ভবত স্ক্যাবিস।  বাংলাদেশে এই রোগ খুবই কমন এবং অনেক মানুষ স্ক্যাবিস (Scabies) আক্রান্ত হয়। 

স্ক্যাবিস, যা আমাদের দেশে খোসপাঁচড়া নামে পরিচিত, ত্বকের একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। এটি সারকোপটিস স্ক্যাবিয়াই (Sarcoptes scabiei) নামক ক্ষুদ্র পরজীবীর (মাইট) কারণে হয়। এই ক্ষুদ্র কীট খালি চোখে দেখা যায় না এবং এরা ত্বকের উপরের স্তরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে সেখানে ডিম পাড়ে। এর ফলে ত্বকে তীব্র চুলকানি এবং ফুসকুড়ি দেখা দেয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না নিলে এই রোগ পরিবারের সবার মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং বেশ কষ্টদায়ক হতে পারে।

 

Scabies - mite under a microscope
মাইক্রোস্কোপের নিচে স্ক্যাবিস এর পোকা

লক্ষণসমূহঃ

  • প্রচন্ড চুলকানি বিশেষ করে রাতে। চুলকানি সাধারণত প্রথমে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে তারপর সেখান থেকে  ঘাড়ে,  নাভির আশে পাশে চামড়ায়,   লজ্জাস্থানের আশেপাশে, এবং পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।এই পোকা মাত্র কয়েকটি শরীরে আসলেই প্রায় পুরো শরীরের চুলকানি শুরু হয় কারণ এটি শরীরে এলার্জির মত সমস্যার সৃষ্টি করে।
  •  চুলকানোর জায়গা একটু লাল হয়ে ফুলে যাওয়া ।
  •  অতিরিক্ত চুলকানির কারণে চামড়া ফেটে যাওয়া। 
  •  আগে থেকে আপনার কোন চামড়ার অসুখ থাকলে সেটা আরও খারাপ হওয়া।

স্ক্যাবিস  কিভাবে ছড়ায়

স্ক্যাবিস মূলত আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে দীর্ঘক্ষণ ধরে ত্বক থেকে ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ যেমন আলিঙ্গন করা, হাত ধরা, বা একই বিছানায় ঘুমানোর মতো কর্মকাণ্ড সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

এছাড়াও, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে, বিছানার চাদর বা বালিশ ব্যবহার করলেও এই রোগ ছড়াতে পারে, যদিও এটি সরাসরি সংস্পর্শের মতো ততটা সাধারণ নয়। জনাকীর্ণ পরিবেশে, যেমন স্কুল, হোস্টেল, নার্সিং হোম বা কারাগারে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

স্ক্যাবিস আক্রান্ত হাতের ছবি। সূত্র এন এইচ এস
স্ক্যাবিস আক্রান্ত হাতের ছবি। সূত্র এন এইচ এস

এসব জায়গায় একসাথে অনেক লোক থাকেন যেমন বস্তিতে, রিফিউজি ক্যাম্পে সেখানে স্ক্যাবিসের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

স্ক্যাবিস যে কারো হতে পারে, স্বাস্থ্যবিধি যেমনই হোক না কেন। তবে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে:

  • শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা।
  • যারা ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে, যেমন হোস্টেল, শরণার্থী শিবির বা কারাগারে।
  • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, যেমন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি বা যারা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন।
  • যারা আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন, যেমন পরিবারের সদস্য বা যৌন সঙ্গী।
 কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেনঃ
  • আপনি যদি মনে করেন আপনার স্ক্যাবিস হয়েছে
  •  আপনার পরিবারের কারো স্ক্যাবিস হলে বা কারো স্ক্যাবিস এর মত লক্ষণ থাকলে। কারণ পরিবারের একজনের স্ক্যাবিস হলে সেটা বাকি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
 চিকিৎসক কি করবেনঃ

 চিকিৎসক সাধারণত আপনার চামড়ায় স্ক্যাবিস এর ফোড়া এবং চুলকানির  কারণে  চামড়ার ক্ষত দেখেই স্ক্যাবিস কি না বলে দিতে পারেন।

স্ক্যাবিস হলে আপনাকে যে ঔষধ দেয়া হবে সেটা খুব ভালোভাবে নিয়ম মেনে ব্যবহার না করলে স্ক্যাবিস কমানো খুবই কষ্টকর।

 স্ক্যাবিসের ঔষধ কিভাবে দিতে হয় তার নিয়মাবলী –

  •  স্কিন ক্রিম বা মলম দেয়া হবে সেটার  বক্সের ভিতরে একটি লিফলেট পাবেন। এটি ভালো করে পড়ুন।
  • ক্রিম বা মলম আপনার মুখমন্ডল বাদে গলা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত সকল জায়গায় দিতে হবে।  যেসব জায়গায় চুলকানি বেশি হয় সেখানে ভালো করে লাগাবেন। কিন্তু একই সাথে যেসব জায়গায় কোন চুলকানি নেই সেখানেও ঔষধ লাগাতে হবে।
  •  একসাথে কয়েকটি ক্রিম বা মলম কিনে আনুন কারণ একবার পুরো শরীরে লাগাতে পুরোটা শেষ হয়ে যায়।
  •  ঔষধ দেয়ার পর সাধারণত ৮ থেকে ১২ ঘন্টা সেটা আপনার শরীরে থাকতে হবে। এসময় গোসল করা  বা হাতমুখ ধোঁয়া  থেকে বিরত থাকবেন। যদি হাত মুখ ধুয়ে থাকেন সে জায়গায় আবার ঔষধ লাগাতে হবে।
  •  যেসব মেয়েরা বুকের দুধ খাওয়াবেন তারা বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে স্তনবৃন্ত থেকে ঔষধ মুছে ফেলবেন এবং বাচ্চা খাওয়ার পরে পুনরায় ঔষধ সেখানে লাগাতে হবে।
  •  বাচ্চাদের  স্ক্যাবিস হলে তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখবে।
  •  ঘরের কারো স্ক্যাবিস হলে তার কাপড় চোপড়, বেডশীট ইত্যাদি গরম পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  •  অনেকের স্ক্যাবিস এর ঔষধে কাজ নাও করতে পারে সে ক্ষেত্রে এক সপ্তাহের বেশি চুলকানি থাকলে পুনরায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক ঔষধ বদলে নতুন ওষুধ দিতে পারেন। 
সতর্কতাঃ

 স্ক্যাবিস হলে খুব বেশি চুলকানি হয়। কিন্তু অতিরিক্ত চুলকাতে গিয়ে অনেকে চামড়া বিভিন্ন জায়গায় তুলে ফেলেন। যার কারণে সেসব জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ইনফেকশন করার সুযোগ পায়। এ ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকতে হবে